Health Tips

ধূমপান ত্যাগ করার শীর্ষ ১০টি উপকারিতা

(ধূমপান ত্যাগ করার বা ছাড়ার উপকারিতা)

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটি এখন আমরা সবাই জানি। তারপরও গোটা বিশ্বে ধূমপায়ীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডা যৌথভাবে একটি দীর্ঘ গবেষণা পরিচালনা করেছেন। ৭ বছরব্যাপী এই গবেষণার রিপোর্টে বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখ করেছেন। ধূমপানের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এতটাই ব্যাপক যে, নিয়মিত ধূমপানের ফলে 10 বছর পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে।

সবকিছু জেনে শুনেও অনেকেই দীর্ঘদিন ধূমপান করার পর এটা আর ত্যাগ করতে চান না। তাদের ধারণা এত বছর ধূমপান করার পর এটা ত্যাগ করে কী হবে! কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এটার বিপরীত ফলাফল পাওয়া গেছে। জার্মান গবেষকরা জানিয়েছেন, যেকোন বয়সেই ধূমপান ত্যাগ করলে তার উপকার পাওয়া সম্ভব।

গবেষকরা আরও বলেন, প্রতিদিন ধূমপান করলে ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়তে থাকে নাটকীয় হারে। কিন্তু এ ঝুঁকি কমতে শুরু করে ধূমপান ত্যাগ করার পরের দিন থেকেই। এরপর থেকে ক্রমাগত কমতেই থাকে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞগণ এটাও বলেছেন, যদি কেউ ৪০ বছর বয়সের আগে ধূমপান ছেড়ে দেয়, তবে ধূমপায়ীর শারীরিক অবস্থা একেবারে আগের মতো হয়ে যেতে পারে।

মনে, ধূমপান ছেড়ে দিলে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে আগের মতো ফিটনেস ফিরে পাওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞগণ আরো বলেন, যদি কেউ ৩০ বছর বয়সের আগে ধূমপান ছেড়ে দেয়। তাহলে তার অবস্থা এতটাই স্বাভাবিক হবে যে, মনেই হবে না সে কখনো ধূমপায়ী ছিলেন।

আবার, কোনো ব্যক্তি ৬০ বছর বয়সে ধূমপান ত্যাগ করলেও পাঁচ বছরের মধ্যে তার হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাবে। তাই আপনি যেকোনো সময় বা যেকোনো বয়সেই ধূমপান ত্যাগ করতে পারেন।

চলুন তাহলে ধূমপান ত্যাগ করার বা ছাড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-

#1-শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়

ধূমপান ফুসফুসের কার্যকারিতা ও কর্ম ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কিন্তু কম বয়সের ধূমপায়ীরা এর কোন লক্ষণ দেখতেই পায়না। ধূমপান থেকে বিরত থাকার তিনদিন পর থেকেই বুকের ভেতরটা হালকা হয়ে যায়। এবং শ্বাস ক্রিয়া সহজ হয়, কারণ তখন আর শরীরের ভেতরে নিকোটিন থাকেনা।

আর এই কারণেই ধূমপান না করার লক্ষণগুলো ভালোভাবে ধরা পড়ে এবং বোঝা যায়। পাশাপাশি, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৩ দিনের মধ্যে আপনার ব্রঙ্কিয়াল টিউব প্রসারিত হবে। ফলে অনেক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারবেন, এনার্জি ফিরে পাবেন এবং স্ট্রেস কমতে শুরু করবে।

অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন থেকে বের হওয়া যে বিষাক্ত গ্যাস শরীর গ্রহণ করেছিলো, তা ১২ ঘণ্টা পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে আসে। এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এতে আপনি আপনার সার্বিক কর্মশক্তি ফিরে পাবেন।

#2-স্ট্রেস কমে যায়

যারা ধূমপান করে তাদের প্রত্যেকেরই ধারণা, ধূমপান করলে স্ট্রেস কমে যায়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। বরং এই অভ্যাস ত্যাগ করার অর্থ হলো, নিজেকে নিকোটিনের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া। তাছাড়া, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার ফলে বাস্তবে কিন্তু আপনার স্ট্রেস অনেকটাই কমে যায়।

ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৩ দিনের মধ্যে আপনার ব্রঙ্কিয়াল টিউব প্রসারিত হতে শুরু করে। ফলে অনেক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারবেন। পাশাপাশি, এনার্জি ফিরে আসে এবং স্ট্রেস কমাতে শুরু করে।

#3-চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়

ধূমপান করলে ত্বক বিবর্ণ, অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। চোখ ও ঠোঁটের পাশে দেখা যায় ছোট ছোট রিংকেল। ধূমপান ত্যাগ করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি, শরীরে পুষ্টি উপাদান এবং অক্সিজেনের যোগান বেড়ে যায়।

ফলে ত্বক পুনরায় সতেজ, প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। আবার ধূমপান ত্যাগ করলে ঘুমের উন্নতি হয়। আর ঘুম ভালো হলে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেলের চিহ্ন পড়ার প্রবণতা কমে যায়।

এছাড়া,ধূমপান ত্যাগ করলে শরীরে কার্বন মনোক্সাইডের প্রবেশ কমে যায়। এর ফলে ত্বকের অক্সিজেনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ করলে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর ফলে ত্বকে জেল্লা বাড়তে শুরু করে। আবার, ধূমপান ত্যাগ করলে ত্বকের বলিরেখা পড়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। কারণ ধূমপান বলিরেখা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ করলে চুল পড়ার প্রবণতা কমে যায়। এবং মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করে।

#4-এনার্জি বৃদ্ধি পায়

ধূমপান শরীরের অক্সিজেনের জোগান কমিয়ে দেয়। ফলে ক্লান্তি-অবসন্নতা এবং মাথাব্যথা বেড়ে যায়। ধূমপান ছেড়ে দিলে রক্ত চলাচল বেড়ে যাবার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এনার্জির পরিমাণও বেড়ে যায়।

ধূমপান ত্যাগ করার 20 মিনিট পর, রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। নাড়ির স্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করে। শরীরের তাপমাত্রা কমে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পাশাপাশি, হাত ও পায়ের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়।

এছাড়াও, ধূমপান ত্যাগ করার ২ সপ্তাহ থেকে ২ মাস পর শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে হাঁটাচলা করতে হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা কমে গিয়ে এনার্জি ফিরে আসে। পাশাপাশি, কাশিভাবও কমতে শুরু করে৷

#5-যৌন-ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

ধূমপান ত্যাগ করলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং আবেগ-অনুভূতির উন্নতি হয়। যা যৌন-জীবনকে স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করে। ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দেবার ফলে গর্ভাশয়ের আস্তরণে পুরুষদের শুক্রাণুর কার্যকারিতা এবং গর্ভধারণ ক্ষমতার উন্নতি হয়।

2010 সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত-মানকে ক্ষতি করে এবং মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন উৎপাদন হ্রাস করে। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে বন্ধ্যত্বের হার বৃদ্ধির পিছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে সিগারেট।

এটি গর্ভপাত অঙ্গের ক্ষতি বা ডিম্ব স্ফোটন সমস্যার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তোলে। তাই ধূমপান ত্যাগ করলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের হারও হ্রস পায়।

#6-মুখের স্বাস্থ্য এবং অনুভূতির উন্নতি ঘটে

মুখের স্বাস্থ্যকর অবস্থা, সজিব নিঃশ্বাস, সুন্দর মুখশ্রী ও ঝকঝকে দাঁত মানুষের ব্যক্তিত্বকে আরও সমৃদ্ধি করে। কিন্তু ধূমপান আপনার দাঁতকে নষ্ট করে দিতে পারে। বিজ্ঞানের দীর্ঘদিনের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাড়ির রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে তামাক বা সিগারেট।

এই জন্য, সকল বয়সের ধূমপায়ীদের মাড়ির বিভিন্ন রোগ অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক মাত্রায় বেশি। যারা ধূমপান করেন তাদের দাঁতের মাড়ির সংলগ্ন স্থানে অধূমপায়ীদের চাইতে বেশি ক্যালকুলাস বা খাদ্য আবরণ জমাতে দেখা গেছে। এটা দাঁতের জন্য খুব ক্ষতিকর। ধূমপান ত্যাগ করার ফলে এই সমস্ত ক্ষতির হাত থেকে খুব সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।

এছাড়া, ধূমপান ত্যাগ করলে মুখের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতির উন্নতি ঘটে। ধূমপানের কারণে স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার যে ক্ষমতা কমে গিয়েছিলো, তা ধূমপান বন্ধ করার মাত্র দুইদিন পরেই বাড়তে শুরু করে। কারণ, ধূমপান ত্যাগ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুপ্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে। পাশাপাশি, ঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

#7-ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ত্যাগ করার উপকারিতা

ধূমপায়ীদের মুখে, নাকে, গলায়, স্বরযন্ত্রে, খাদ্যনালীত (অন্ননালী), অগ্ন্যাশয়ে, মূত্রাশয়ে, গর্ভ (জরায়ুর), রক্তে (লিউকেমিয়া) এবং কিডনিতে ক্যান্সার খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। আর ধূমপান ত্যাগ করার মাধ্যমে এই সমস্ত ক্যান্সারের অধিকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ধূমপান ত্যাগ করার ৯ থেকে ১০ বছর পর। ধূমপায়ীদের তুলনায় অধূমপায়ীদের যকৃতে ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেক কমে আসে। পাশাপাশি, হৃদপিণ্ড অধূমপায়ীদের মতোই হয়ে যায়।

সিগারেটের ধোঁয়া থেকে প্রায় পাঁচ হাজার রাসায়নিক দ্রব্য সনাক্ত করা গেছে এ পর্যন্ত। এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৭০ টি সরাসরি ক্যান্সারের জন্য দায়ী। যেসব ক্যান্সারের জন্য মানুষ সবথেকে বেশি মারা যায়, তার মধ্যে প্রথম হলো ফুসফুসের ক্যান্সার। নারী ও পুরুষ উভায়ের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো ফুসফুসের ক্যান্সার।

যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার রিসার্চ কেন্দ্রের ডক্টর রাচেল ওরিট বলেন, “ধূমপান ছাড়লে সুফল আসলে দ্বিগুণ, এটি খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক একটি বিষয়। প্রথমত, ফুসফুসের কোষে ধূমপান সংম্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমে যাবে। দ্বিতীয়ত ফুসফুস নিজেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুস্থ কোষ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কোষের প্রতিস্থাপন শুরু করবে।

টানা ৪০ বছর ধরে প্রতিদিন এক প্যাকেট সিগারেট খাওয়ার পর যারা ধূমপান ছেড়েছেন, তাদের ফুসফুসের ক্ষেত্রেও এই বিষয় দেখা গেছে।তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে আমাদের অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করা উচিত।

#8-হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়

হৃদরোগ বলতে সাধারনভাবে হৃৎপিন্ড, রক্তবাহী ধমনী, শিরা, মস্তিষ্ক ও বৃক্ক সম্পর্কিত রোগকে বোঝায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়তে থাকে। আর এই হৃদরোগের সাথে ধূমপানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কখনো ধূমপান করেনি তাদের থেকে ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ।

ধূমপান ত্যাগ করার 1 বছর পরে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেক কমে আসে।আবার,সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এতটাই কমে আসে, যারা কখনো ধূমপান করেনি তাদের মত।

জার্মান গবেষকরা জানিয়েছেন, যে কোনো বয়সেই ধূমপান ত্যাগ করলে উপকার পাওয়া সম্ভব। এমনকি ৬০ বছর বয়সে ধূমপান ত্যাগ করলেও পাঁচ বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাবে।

এছাড়া, ধূমপানের কারণে রক্তের ধমনীতে প্লেক নামক একধরণের চর্বি জাতীয় পর্দা জমার প্রবণতা দেখা যায়। এই রোগের নাম অ্যাথেরোসক্লেরোসিস। আবার, ধূমপানের কারণে করোনারি হার্ট ডিজিজের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

ধূমপানের কারণে রক্ত জমাট বাঁধারও সম্ভাবনা থাকে। এই সবকিছুই করোনারি হার্টের অসুখ। আর ধূমপান ত্যাগ করার মাধ্যমে এই সমস্ত হার্টের অসুখ থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

#9-ফুসফুস স্বাভাবিক হয়ে যায়

ফুসফুসের সুস্থতায় ধূমপান ত্যাগ করার উপকারিতা অনেক। কারণ, সিগারেটে থাকা হাজার ধরণের রাসায়নিক ফুসফুসের কোষের ডিএনএকে পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে সুস্থ থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে পরিবর্তন করে দেয়।

আর এই পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সার হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেই অবস্থা থেকে আবারো সুস্থ পরিস্থিতিতে যেতে ফুসফুসের প্রায় ‘জাদুকরী’ ক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া ফুসফুসের কয়েকটি কোষই পরবর্তীতে ফুসফুসকে আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখে।

তবে শুধুমাত্র ধূমপান ছাড়ার পরই ফুসফুসের সেই ক্ষমতা কাজ করে।সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ৪০ বছর ধূমপান করার পরও যারা ধূমপান ছেড়েছে তাদের ক্ষেত্রেও অপরিবর্তিত কোষের মাধ্যমে সুস্থ কোষ পুনঃনির্মাণের ঘটনা ঘটেছে।

টরেন্টোর সেন্ট জোসেফ হেলথ সেন্টারের রেসপাইরেটারী মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. গ্রাহাম বারলিন বলেন। যাদের ফুসফুসের কার্যক্রম কমে গেছে তারা যদি ধূমপান ছেড়ে দেন তবে ফুসফুস অধিকতর ক্ষতি হতে রক্ষা পাবে।

পাশাপাশি ফুসফুসের কার্যকারিতার ক্ষতি বা লাঙ্গ ক্যাপাসিটির যতখানি অবনতি ঘটে ধূমপান ছেড়ে দিলে সেটা আবার উন্নতি হতে শুরু করে। তাই যে কোনো বয়সে ধূমপান ছাড়লে অবশ্যই ফুসফুস, হার্ট, মস্তিষ্কের ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস পায় এমন অভিমত গবেষকদের।

#10-সুস্থভাবে বেঁচে থাকার গ্যারান্টি

ধূমপান ক্যান্সার এবং অসুস্থতার কারণ। ধূমপান ছেড়ে দিলে আরও বেশীদিন সুস্থভাবে বাঁচতে পারবেন, এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এটা ত্যাগ করার ২০ মিনিট পরেই শরীরের রক্তচাপ ও নাড়ির গতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। ধূমপানের ফলে সৃষ্ট উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে থাকে। দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কর্ম উদ্দীপনা বাড়তে শুরু করে।

ধূমপান থেকে বিরত থাকার তিনদিন পরে থেকেই বুকের ভেতরটা হালকা মনে হয় এবং শ্বাস ক্রিয়া সহজ হয়, কারণ তখন আর শরীরের ভেতরে নিকোটিন থাকে না। আর সে কারণেই ধূমপান না করার লক্ষণগুলো ভালোভাবে ধরা পড়ে বা বোঝা যায়। এটা ত্যাগ করার 3 থেকে 9 মাস পর থেকেই বুঝতে পারবেন আপনার আর নিঃশ্বাস নিতে বিশেষ কষ্ট হচ্ছে না।

ধূমপানের কারণে যে খুকখুকে কাশি হতো তাও অনেক কমে এসেছে। এই সময় থেকে ব্রঙ্কিয়াল টিউবের ফাইবার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। যা ফুসফুস থেকে ব্যাকটেরিয়ার দূর করে পরিষ্কার রাখে।

ধূমপান ত্যাগ করার পর, ধূমপান জনিত কারণে মৃত্যু, ফুসফুসের রোগ, গলা-মুখ-ফুসফুসের ক্যান্সার ও প্যাক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত হ্রাস পায়। কখনোই যারা ধূমপান করেননি তাদের সমান হয়ে যায়। তাই ধূমপান ত্যাগ করলে অনেকটা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার গ্যারান্টি পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সামারি

একটি সিগারেটের ধোঁয়ায় দুইশোরও বেশি বিষাক্ত পদার্থ থাকে। যা শরীরের জন্য একটি বোঝা। কিন্তু ধূমপান বন্ধ করার পরপরই শরীরের ভেতরে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিন ধূমপান করলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়তে থাকে নাটকীয় হারে। কিন্তু এ ঝুঁকি কমা শুরু হবে ধূমপান ত্যাগ করার পর থেকেই। আর ক্রমাগত এ ঝুঁকি কমতেই থাকে।

কারণ, ধূমপান ত্যাগ করলে শরীর প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। ফলে সময়ের সাথে সাথে দেহ ধূমপান করার পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে আমাদের অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করা উচিত। আমাদের অবশ্যই এটা মনে রাখা উচিত, একজন ধুমপায়ীর ক্ষেত্রে ধূমপান ত্যাগ করার বা ছাড়ার উপকারিতা অনেক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button