ধূমপান ছাড়ার বা ত্যাগ করার 10টি সহজ উপায়

ধূমপান ছাড়ার বা ত্যাগ করার বিজ্ঞানসম্মত সহজ উপায়

অন্যান্য অভ্যাসের মতো ধূমপান একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসটিতে যখন মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ে তখন, তার শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। এ কারণেই এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। কিন্তু ধূমপান ত্যাগ করা খুব সহজ কোনো ব্যাপার নয়।

আবার একেবারে কঠিন কিছুও নয়। তবে, সিগারেট ধরা যতটা সহজ, ছাড়া ঠিক ততটাই কঠিন। হয়তো প্রতিদিনই সিগারেট ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করছেন, কিন্তু আবার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গও করছেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একবার কৌতূহল বশত একটি সিগারেট পান করেছে, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুরাদস্তুর ধূমপায়ী হয়ে গেছেন। তবে সব সময় মনে রাখবেন, আপনিই আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রক। আপনি যদি সত্যিই মন থেকে ধূমপান ত্যাগ করতে চান তবে অবশ্যই এটি সম্ভব।

আসলে ধূমপানের নেশা একেকজনের বেলায় একেক রকমভাবে জেগে ওঠে। তবে, বেশিরভাগ ধূমপায়ীর দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু সময় থাকে যখন ধূমপান করতে বেশি ইচ্ছা হয়। তাই, কোন বিষয়টি আপনাকে ধূমপান করতে বেশি আগ্রহী করে তুলবে তা আপনিই ভালো জানবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের যেই সময়গুলোতে আপনার ধূমপান করতে ইচ্ছা হয়, সে সময় অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, তামাক হচ্ছে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পূর্ণ ধূমপান ত্যাগের জন্য আপনাকে 30 বার পর্যন্ত চেষ্টা করা লাগতে পারে। তারপরও আপনি যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলে ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে।

ধূমপান কখন নেশাতে পরিণত হয়

ধূমপান ছাড়ার উপায়

ধূমপান ছাড়ার সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে ধূমপান কখন নেশা বা আসক্তিতে পরিণত হয়। সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন এর নেশা সৃষ্টি করার প্রধান কারণ। নিকোটিন মানুষের মস্তিস্কের কেমিক্যালের সাথে এমনভাবে মিশে যায় যে, কিছু দিনের মধ্যেই এটার জন্য মস্তিস্কে আলাদাভাবে চাহিদার সৃষ্টি হয়।

মস্তিস্ক যখন নিকোটিনের অভাব বোধ করে, তখন আপনি বিমর্ষ এবং দুর্বল বোধ করেন। আর তখনই আপনার মনে হয়, ‘এখন একটা সিগারেট দরকার’। শুধুমাত্র মস্তিস্কের চাহিদার কারণেই নয়। আরও অনেক কারণ আছে যা আপনার মধ্যে ধূমপানের ইচ্ছা জাগ্রত করে।

সিগারেটের গন্ধ, কাউকে ধূমপান করতে দেখা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদির কারণে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে। আবার, মানবদেহেকে সতেজ রাখতে দেহের ভিতর এক ধরণের হরমোন নিঃসরণ হয়। যদি কেউ ধূমপান করে তাহলে ধীরে ধীরে এই হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তামাকের এই নিকোটিন হরমোনের ঐ কাজটি করতে থাকে।

তাই, হুট করে ধূমপান বন্ধ করলে আপনার অস্বস্তি লাগতে পারে এবং শারীরিক দুর্বলতা বোধ হতে পারে। তাই হুট করে নয়, ধূমপান ত্যাগ করার জন্য আপনি একটু সময় নিন। তাহলে কাজটি আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে,তীব্র মানসিক ইচ্ছা এবং জীবনযাপনের কিছুটা পরিবর্তন আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে।

চলুন তাহলে সহজেই ধূমপান ছাড়ার বা ত্যাগ করার কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

#1-নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন

আমরা জানি ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তাই, ধূমপান ছাড়ার জন্যে প্রথমে দরকার প্রবল ইচ্ছাশক্তি। আপনার এই ইচ্ছাশক্তি যত প্রবল হবে ততো তাড়াতাড়ি আপনি ধূমপান ছাড়তে সক্ষম হবেন।

মনে রাখবেন, ধূমপান ছাড়ার জন্য ইচ্ছাশক্তিই মূল ভূমিকা পালন করে। একজন ব্যক্তি যদি সচেতনভাবে ধূমপানকে এড়িয়ে চলে, আসক্ত হতে না চায় কিংবা ধূমপান ছাড়তে চায়, তাহলে সে খুব সহজেই তার মনোবল দিয়ে ধূমপানকে প্রতিরোধ করতে পারবে।

আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণের একটি বড় পদ্ধতি হলো গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের পদ্ধতি শেখা। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস সাহায্য করে মনকে শান্ত করতে এবং যেকোনো চাপযুক্ত অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে। এই ক্ষেত্রে ভালো করে নাক দিয়ে দম নিন। কয়েক সেকেন্ড দম আটকে রাখুন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার করুন।

এটা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সাহায্য করে। পাশাপাশি, যেকোনো অভ্যাস ত্যাগ করলে প্রথম দিকে সেই অভ্যাস আবার শুরু করবার ব্যাপক প্রবণতা দেখা যায়। তাই, আপনার সুনিশ্চিত ও দৃঢ় মানসিকতা এই সমস্যার সমাধান করতে খুব দারুণ ভাবে সাহায্য করবে।

#2-কেন ধূমপান ছাড়বেন কারণ নির্ধারণ করুন

আপনি কেন ধূমপান ছাড়তে চান সে বিষয়টি নির্ধারণ করুন। শুধুমাত্র ছাড়তে হবে বলেই ছাড়ছেন সেটা পর্যাপ্ত নয়। একটি ব্যক্তিগত শক্তিশালী কারণ অবশ্যই থাকা দরকার। যা আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে। যেমন, নিজেকে সবসময় তরুণ হিসেবে দেখতে চান। অথবা আপনার ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে চান। অথবা আপনি নিজেকে সব সময় সুস্থ রাখতে চান। এই ধরনের কোন স্ট্রং লক্ষ্য খুঁজে বের করুন এবং আস্তে আস্তে ধূমপান করা কমিয়ে দিন।

কারণ, ধূমপান ছাড়ার সময়টা অনেক দীর্ঘ, তাই যেকোনো সময় আবার আপনি ধূমপান শুরু করতে পারেন। তাই নিজের সংকল্পে অটুট থাকতে ধূমপান ছাড়ার নির্দিষ্ট কারণ গুলি আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। লক্ষ্য পূরণে ব্যক্তিগত ডায়েরি ব্যবহার করুন, লক্ষ্যগুলো লিখুন।

যখন আপনার ধূমপানের ইচ্ছা হবে, তখন অনুভূতি কেমন হয় সেগুলো লিখুন‌। পাশাপাশি, নিজের লক্ষ্যের কথা বারবার মনে করুন। তাহলে ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, ধূমপান ছাড়ার জন্য এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

#3-নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ধূমপান ত্যাগ করতে চাইলে একটি ব্যায়ামের রুটিন করে ফেলুন। ধূমপান ছাড়া থাকতে থাকতে যখন খুব ধূমপানের ইচ্ছে করবে এবং শারীরিক কষ্ট হবে, তখন ৫-১০ মিনিট ব্যায়াম করুন। মনকে ধূমপানের প্রলোভন থেকে দূরে রাখতে হাঁটতে বের হয়ে যান বা জিমে ভর্তি হন। বিজ্ঞানীদের মত, ব্যায়াম মানসিক চাপ কমায় এবং ধূমপানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।

তাই ব্যায়াম শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়ান। বিশেষ করে জোরে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা সাইক্লিং করা এই ব্যায়ামগুলো বিশেষ উপকারী। পাশাপাশি, বিভিন্ন শারীরিক কাজও আপনার ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু খালি হাতের ব্যায়াম নয়, ছোটখাটো ভারোত্তোলন ব্যায়ামও ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করে। এর জন্য অফিসের ডেস্কে রাখতে পারেন ওজন ওয়ালা কিছু এবং ধূমপানের ইচ্ছে হলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরিও দূর হবে। তবে ব্যায়ামের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।

#4-মেডিটেশন করতে পারেন

কোন রকম থেরাপি বা বিকল্প মেডিটেশন ছাড়া ধূমপান ত্যাগ করা খুবই কঠিন। কারণ সিগারেটের নিকোটিনের ওপর ব্রেইন অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর এই সময় ধুমপান ছেড়ে দিলেই নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়। তাই ধূমপান ত্যাগ করার সময় বিকল্প থেরাপির কথা চিন্তা করতে হবে। আর ধূমপান ত্যাগ করতে মেডিটেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২০১৩ সালে দুই দল ধূমপায়ীদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দুই দল মানুষের মধ্যে যারা নিয়মিত মেডিটেশনে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা নিজেদের ধূমপানের পরিমাণ ৬০% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছিল। অন্য দলের ধূমপানের পরিমাণে কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। সুতরাং ধূমপান ত্যাগ করার জন্য আপনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেডিটেশনকেও রাখতে পারেন।

#5-আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন

ধুমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে ধুমপান না করা আপনার জন্য যতটা জরুরী, ঠিক ততটাই আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও জরুরী। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, প্রেম-ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক অশান্তির কারণে অনেকেই ধুমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। রাগ, অসস্তি, দুঃখ ইত্যাদি কিছু কিছু আবেগ রয়েছে যা একজন ধুমপায়ীকে আরও ধুমপান করতে উদ্বুদ্ধ করে।

এমনকি, আপনি যদি কখনো ধুমপান না করে থাকেন, তারপরেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক বড় একটা সম্ভাবণা রয়েছে যে, আপনি ধুমপানের জালে আটকা পড়ে যাবেন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।

আপনি যাতে খুব সহজে কোন কিছুতে রেগে না যান বা খুব তাড়াতাড়ি অবসাদগ্রস্থ হয়ে না পড়েন, সেদিকে খুব বেশি খেয়াল রেখতে হবে। যথা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

#6-বন্ধু অথবা কাছের মানুষদের সাহায্য নিন

শুধুমাত্র পেশাদার সাহায্য নয়। আপনার কাছের মানুষেরাও আপনার এই অভ্যাস দূর করতে অনেক সাহায্য করতে পারে। আপনি ধূমপান বন্ধ করতে চাইছেন বিষয়টি বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য এবং অফিসের সহকর্মীদের জানান। তাদের বলুন আপনাকে উৎসাহিত করতে।

হয়তো কোনো পার্টিতে গিয়ে একটি সিগরেট ধরিয়েই ফেলেছেন, তখন আশপাশের লোকজন নিষেধ করলে বিষয়টি কাজে লাগতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের বিভিন্ন বাজে অভ্যাস বর্জন করতে মিলিত আচরণগত চিকিৎসা বেশ কাজে আসে।

আবার যখন আপনি ধূমপান করতে চাইবেন। তখন যদি আপনার কাছের মানুষগুলো বারবার নিষেধ করে, তাহলে আপনার কাছে এটা বিরক্তিকর মনে হবে। আর এই বিরক্তিবোধ আপনার ধূমপান ত্যাগ করতে অনেক সাহায্য করবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি বন্ধু এবং পরিবারের লোকজনের প্রেরণাও ধূমপান ত্যাগ করতে বেশ সাহায্য করবে আপনাকে।

#7-স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে নজর দিন

ধূমপান ত্যাগ করার ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধূমপান ছেড়ে দিয়ে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন। এতে করে শরীরে হরমোনের ঘাটতি দূর হবে । ফলে ধূমপান করার ইচ্ছাও কমে আসবে ধীরে ধীরে।

আবার, প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি, দুধ, ঘি এবং ডিম খেলে ধূমপানের মতো বদ অভ্যাস দ্রুত ত্যাগ করা খুব সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও সুস্থ থাকার জন্য বেশি করে ফল খাওয়া উচিত। মৌসুমি ফল খেলে শরীর অনেক বেশি সতেজ থাকে। ধূমপান দূর করতে চাইলে মৌসুমি ফল ছাড়াও আপেল, শশা, কলা এবং পেয়ারা বেশ কার্যকরী।

পাশাপাশি, আপনার ধূমপানের অভ্যাস দূর করতে প্রচুর পানি পান করুন। পানি, নিকোটিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানগুলোকে দেহ থেকে বের করতে সাহায্য করবে। ধূমপান করার জন্য আপনার মুখ গহ্বরে যে চাহিদা তৈরি হয়, সেটিও মেটাতে সাহায্য করবে পানি।

পাশাপাশি, ধূমপান না করার কারণে আপনার দেহে যে ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া, ধূমপান ত্যাগ করার সময় আপনার যদি ডায়েট চলে, তাহলে সেটি এড়িয়ে চলুন কিছুদিনের জন্য।

#8-বাড়ী ঘর পরিষ্কার করুন

ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত সব রকম জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলে বাড়ী পরিষ্কার করে ফেলুন। লাইটার বা দেশলাই সরিয়ে দিন। স্ট্রে সরিয়ে ফেলুন। আপনার ব্যবহৃত কোন জামা বা বিছানার চাদরে যদি সিগারেট, বিড়ি বা চুরুটের গন্ধ থাকে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার গাড়িতে গন্ধ থাকলে গাড়িও ধুয়ে ফেলুন। ঘরে ভালো কোন সুগন্ধি স্প্রে ব্যবহার করুন।

আসলে কোন গন্ধে যাতে ফের ধূমপানের ইচ্ছা জেগে না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ি যদি অন্য কেউ ধূমপান করে, তাহলে তাকে বলুন বাড়ি ধূমপান না করতে। ধূমপান এমন একটা অভ্যাস যেটা খুব সহজে আবার ফিরে আসতে পারে। তাই ধূমপানের সমস্ত আলামত থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। যেন কখনোই ধূমপান করার ইচ্ছা নতুন করে জেগে উঠতে না পারে।

#9-খারাপ সঙ্গ থেকে দুরে থাকুন

গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশির ভাগ ধুমপায়ী শুরুর দিকে বন্ধু বান্ধব বা কোন ব্যক্তির দ্বারা ধুমপান করতে প্রলুব্ধ হয়ে থাকেন। আবার যখন তারা ধুমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেই একই ধরনের মানুষগুলো তাদের ধুমপান ত্যাগের সংকল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আপনি যাদের সাথে সব সময় চলাফেরা করেন তারা যদি ধুমপায়ী হয়ে থাকে, তাহলে তারা যখন আপনার সামনে ধুমপান করবে, তখন আপনারও ধুমপান করতে ইচ্ছা করবে। কিছু কিছু সময় তারা আপনাকে পুনরায় ধুমপান করতেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

তাই আপনি যখন ধুমপান করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন, তখন আপনাকে অবশ্যই এ ধরনের সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে। তার পরিবর্তে আপনি পরিবার বা অন্যান্য কাছের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটানো শুরু করুন।

যাদের কাছে আপনার ধুমপান করা মোটেও পছন্দনীয় নয়। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আপনি সিগারেট ত্যাগ করেছেন। এজন্য এই সময় আপনাকে এমন কিছু কঠিন কাজও করতে হবে। এটা আপনার ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে।

#10-নিকোটিন পরিবর্তন করুন

নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট বলতে, তামাকের নিকোটিনের পরিবর্তে অল্প মাত্রায় অন্য কোন নিকোটিন গ্রহন করাকে বুঝায়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সময় মস্তিস্ক নিকোটিনের অভাবে ভোগে। তাই ধূমপান ছাড়ার সময় সাময়িকভাবে নিকোটিন গাম, প্যাচ, ইনহেলার, স্প্রে এবং লজেন্স গ্রহণ করতে পারেন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এর মতে, এই নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি আপনার ধূমপান ত্যাগের কিছু উপসর্গকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। আবার অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিকোটিন গামের মতো বস্তু ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে সহায়তা করে।

উপরের সব কিছু যদি বিফলে যায় তাহলে শেষ উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন ই-সিগারেট। ই-সিগারেটে নিকোটিন থাকে কিন্তু কোনো ক্ষতিকারক উপাদান নেই, যা আপনার ধূমপান ত্যাগে সিড়ি হতে পারে। মনে রাখতে হবে। আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে এগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।

ধূমপান ছাড়ার উপায়

প্রতিক্রিয়া

নিকোটিন আমাদের শরীরে এমনভাবে ছড়িয়ে যায় যে, ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার ৮ থকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত এর প্রভাব আমাদের সমস্ত শরীরে বিদ্যমান থাকে। এই সমস্যা থেকে বাঁচার বিশেষ কোন উপায় নেই। ধূমপান ছাড়ার প্রথম ৪৮ ঘণ্টা এটা তীব্র মাত্রায় থাকে। যেহেতু সমস্যাগুলো মারাত্মক না তাই খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। খুব বেশি হলে ৬ মাস লাগবে আপনার সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে।

ধূমপান ত্যাগ করার প্রথম দিকে আপনার শরীরে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন:

  • মাথা ব্যথা করতে পারে।
  • হাত পা শির শির করতে পারে।
  • অতিরিক্ত রাগ হতে পারে।
  • পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ঠাণ্ডা লাগার মত অবস্থা হতে পারে।
  • দুশ্চিন্তা হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম না হতে পারে।
  • হতাশা ও অস্বস্তি আসতে পারে।
  • মনোযোগের অভাব হতে পারে।

এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারন এইগুলো মারাত্মক কিছু নয়, শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এইসব প্রতিক্রিয়া খুব সহজেই নির্মূল করা সম্ভব।

ধূমপান ত্যাগ করার উপায়

সামারি

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-এটা জানেন না এমন মানুষ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জানার পরও এই ধূমপান করে থাকেন অনেকেই। ধূমপানের ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগের আশঙ্কাসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর পরও মানুষ ধূমপান ত্যাগ করতে ব্যর্থ হন। প্রতি বছর কোটি মানুষ চেষ্টা করেন ধূমপান ত্যাগ করার জন্য, কিন্তু অধিকাংশই বিফল হন।

কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর ধূমপান ত্যাগ করতে না পেরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন নিজের ওপর। তবে সব সময় মনে রাখবেন, আপনিই আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রক। আপনি যদি সত্যিই মন থেকে ধূমপান ত্যাগ করতে চান তাহলে অবশ্যই এটি সম্ভব।

নেশা মুক্তির ক্ষেত্রে ওষুধ, ইঞ্জেকশন কোনোটাই ততক্ষণ কার্যকর হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আসক্ত ব্যক্তি নিজেই তার নেশা থেকে মুক্তি চাইছেন৷ যেসব কর্মকাণ্ড আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগায় সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন প্রথম কয়েক দিন খুবই কষ্ট হবে। তবে, হতাশ বা নিরাশ হওয়া যাবেনা।

চিন্তা করুন সিগারেট না খেলে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে। রক্তের কার্বন মনোক্সাইড স্বাভাবিক থাকবে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে এবং ফুসফুস ভালো থাকবে। কাজেই সিগারেট ছাড়ুন সুস্থ থাকুন। আজ আমরা ধূমপান ছাড়ার উপায় সম্পর্কে জানলাম।

Leave a Comment