তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা: একটি অসাধারণ আলোচনা

(তরমুজের উপকারিতা)

গরমের দিনে সবার প্রিয় একটি ফলের নাম হলো “তরমুজ”। এটি অনেক সুস্বাদু এবং রসালো প্রকৃতির একটি ফল। এটি “Cucurbitaceae” পরিবারের “C. lanatus” প্রজাতির একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি একই সঙ্গে ফল এবং সবজি। কুমড়ো, স্কোয়াশ, শশা, তরমুজ সব একই পরিবারের অন্তর্গত। এটি সর্বপ্রথম প্রাচীন মিসরের দ্বাদশ রাজবংশের রাজা আমেনমহাট -১-এর শাসন আমলে ১৯৯১-১৯৬২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে দেখতে পাওয়া যায়।

মৌসুমী ফল হিসাবে সৃষ্টিকর্তা তরমুজের ভিতরে মানুষের জন্য অসাধারণ সব স্বাস্থ্য উপকারিতা লুকিয়ে রেখেছেন। তবে ক্ষতিকারক উপাদান নেই বললেই চলে। এই ফলের ৯৬ পার্সেন্টই পানি, ৬% চিনি এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে ২ পার্সেন্ট। এটি একটি ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় ফল।

তাই আজ আমরা জানবো

  • তরমুজের সমস্ত পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি?
  • তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি?
  • তরমুজের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো কি কি? এবং-
  • তরমুজের বিখ্যাত কিছু রেসিপি।

চলুন তাহলে স্টেপ বাই স্টেপ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।

তরমুজের উপকারিতা

তরমুজের পুষ্টি উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-তরমুজের পুষ্টিমান নিম্নে প্রদত্ত হলো-

  • পুষ্টিমান – পরিমাপ
  • পানি – ৯১.৪৫ g,
  • স্নেহ পদার্থ – ০.১৫ g,
  • খাদ্য আঁশ – ০.৪ g,
  • শর্করা- ৭.৫৫ g,
  • শক্তি – ১২৭ কিজু ,
  • প্রোটিন- ০.৬১ g,
  • চিনি – ৬.২ g,
  • কোলিন- ৪.১ মিগ্রা,
  • নায়াসিন (বি৩)- ০.১৭৮ মিগ্রা,
  • থায়ামিন (বি১)- ০.০৩৩ মিগ্রা,
  • প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫)- ০.২২১ মিগ্রা,
  • ভিটামিন সি- ৮.১ মিগ্রা,
  • বিটা-ক্যারোটিন – ৩০৩ μg,
  • রিবোফ্লাভিন (বি২)- ০.০২১ মিগ্রা,
  • ভিটামিন বি৬- ০.০৪৫ মিগ্রা,
  • ফসফরাস- ১১ মিগ্রা,
  • লৌহ- ০.২৪ মিগ্রা,
  • পটাসিয়াম- ১১২ মিগ্রা,
  • ক্যালসিয়াম- ৭ মিগ্রা,
  • জিংক- ০.১ মিগ্রা,
  • ম্যাগনেসিয়াম- ১০ মিগ্রা,
  • ম্যাঙ্গানিজ- ০.০৩৮ মিগ্রা,
  • সোডিয়াম- ১ মিগ্রা,

চলুন তাহলে এখন বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা

1-শরীর আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে

আমরা আগেই জেনেছি একটা পুরো তরমুজে নব্বই শতাংশ পানি থাকে। আর শরীরকে আদ্র রাখতে সম্পূর্ণ কৃতত্ত্বটাই পানির। গরমের দিনে বা কঠিন পরিশ্রমের পরে, যখন আপনার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম বেরিয়ে যায়, তখন সামান্য লবন ছিটিয়ে কিছুটা তরমুজ খেতে পারেন। এটা আপনার শরীরের পানি শূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করবে।

পাশাপাশি, আপনার শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট এবং কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি পূরণ করবে। যেটা আপনার হারিয়ে যাওয়ার শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।

2-হার্টের সুস্থতায় তরমুজ বেশ উপকারী

বর্তমান সময় হৃদরোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ। তবে একটু সচেতন থাকলে এবং প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আপনি আপনার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে, খাবার তালিকায় প্রতিদিন কিছুটা তরমুজ রাখতে পারেন।

কারণ, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজের ভিতরে লাইকোপেন নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ উভায় কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, তরমুজে সিট্রুলাইন নামক আরো একটি উপাদান রয়েছে, যেটিকে অ্যামিনো অ্যাসিড বলা হয়। এই উপাদানটি মানুষের শরীরের নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আর এই নাইট্রিক অক্সাইডের কাজ হল মানুষের শরীরের রক্তনালীকে প্রসারিত করা।

আর, রক্তনালী প্রসারিত হলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ কমে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমতে থাকে। এছাড়াও, তরমুজে হার্টের জন্য উপকারী বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যেমন: ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ভিটামিন A, B6, C ইত্যাদি।

3-ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

বর্তমান সময় অন্যতম আরেকটি মরণ ব্যাধির নাম হল “ক্যান্সার”। আর তরমুজে মধ্যে লাইকোপেন ও কিউকারবিটাসিন ই সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিজ্জ উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলোর ক্যান্সার বিরোধী ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। লাইকোপেন মানুষের শরীরের কোষ বিভাজনকে উৎসাহিত করে, ফলে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন রোধ পায়। আর আমরা জানি, অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন ক্যান্সারের সব থেকে বড় কারণ গুলোর একটি।

আর কিউকারবিটাসিন ই ক্যান্সার কোষের অটোফ্যাজি প্রচার করে, ফলে শরীরে টিউমার বৃদ্ধি রোধ পায়। এই অটোফ্যাজি হল এমন একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, যেটা আপনার শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই উপাদানটিও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে, প্রোস্টেট, কোলন, ফুসফুসের ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদিও এই বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

4-হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

শারীরিক সুস্থতার জন্য হজম শক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর আমরা আগেই জেনেছি, তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং অল্প পরিমানে খাদ্য আঁশ রয়েছে। আর এই দুটি উপাদানই স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ার জন্য অনেক উপকারী।

খাদ্য আশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে স্বাভাবিক ম্যল ত্যাগে সহায়তা করে। ফলে পেট পরিষ্কার থাকে। অন্যদিকে পানি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো নিষ্কাশন করতে সহায়তা। এছাড়াও হজম প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি, অন্ত্রের প্রয়োজনীয় পুষ্টির উৎপাদনকে বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে তরমুজ। তাই হজম শক্তি বাড়াতে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

৫-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সুস্থ থাকার জন্য শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তরমুজ বেশ উপকারী।

তরমুজ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। আর আমরা জানি ভিটামিন ‘সি’ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকরী। এছাড়া, এতে রয়েছে ভিটামিন ‘B6’। এই উপাদানটি শরীরে এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে, ফলে শরীরে সঠিক পরিমাণে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি হয়। এছাড়াও, আমরা আগেই জেনেছি তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে, তাই তরমুজ খেলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

আবার, তরমুজে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই উপাদানটি প্রদাহবিরোধী এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও তরমুজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

৬-ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন দুই কাপের মতো তরমুজ খেয়ে শরীরের ভিটামিন এ এবং সি এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কারণ তরমুজে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ রয়েছে। আর এই ভিটামিন এ এবং সি ত্বকের সুস্থতায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ‘এ’ ত্বকে নতুন কোষ গজাতে এবং ভিটামিন ‘সি’ ত্বককে নরম, মসৃণ এবং কোমল রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া, তরমুজে বিটা-ক্যরোটিন নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটি ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, তরমুজে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন B6, লাইকোপেন ইত্যাদ একাধিক উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলোও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

৭-দৃষ্টিশক্তি লোপ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

বর্তমান সময় বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া যেন একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে যেমন: শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ এর অভাব হয়, বয়স জনিত বিভিন্ন প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে হয়, এছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক কারণে হয়ে থাকে।

আর তরমুজে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি এবং ক্যারোটিনয়েড উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলো চোখের রেটিনার সুরক্ষিত রাখতে খুবই কার্যকরী। পাশাপাশি, চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধ করতে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। জেনে রাখা ভালো, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া, আমরা আগেই জেনেছি তরমুজে লাইকোপিন নামক একটি উপাদান রয়েছে। যেটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে। ফলে বয়স জনিত দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ হয়। যদিও এই বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।

তবে একটি টেস্ট-টিউব পরীক্ষায় দেখা গেছে, লাইকোপিন চোখের কোষের ক্ষতি করে এমন প্রদাহজনক মার্কার গুলির ক্ষমতা হ্রাস করতে সাহায্য করে। তাই চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

৮-শারীরিক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে

তরমুজ শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অন্যতম একটি উৎস। তরমুজে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ ভিটামিন B6, কার্বোহাইড্রেট, খাদ্য আঁশ, চিনি, প্রয়োজনীয় ফ্যাট, ভিটামিন ‘সি’ এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। তবে এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। প্রতি ১৫২ গ্রাম তরমুজে ৪৬ ক্যালোরির মতো পাওয়া যায়।

ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন B6, আপনি প্রতিদিন যে খাবারগুলো খান ওই খাবারের প্রোটিন গুলোকে ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে প্রতিদিন আপনার খাবার তালিকায় কিছুটা তরমুজ রাখতে পারেন।

৯-প্রদাহ কমাতে তরমুজ এর উপকারিতা

মানুষের দীর্ঘ মেয়াদি অনেক রোগের অন্যতম একটি কারণ হলো প্রদাহ। আর এই প্রদাহ প্রতিরোধে তরমুজের বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা আগেই জেনেছি, তরমুজের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

আর এই উপাদানগুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারটিনয়েড, ট্রিটেপেনইডিস, ফেনোলিক নামক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদান গুলোও শারীরিক যে কোন ধরনের প্রদয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

১০-ওজন কমাতে তরমুজের উপকারিতা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ‌ তরমুজ একজন মানুষের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফিট রাখতে সাহায্য করে। কারণ, একটি বড় সাইজের তরমুজের টুকরায় ২২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮৬ ক্যালরি, ১ গ্রামের থেকেও কম ফ্যাট রয়েছে এবং কোন ধরনের কোলেস্টরেল নেই। পাশাপাশি এটি একজন মানুষের একদিনে যে পরিমাণ ফাইবার প্রয়োজন তার 5% পূরণ করতে সক্ষম।

এছাড়াও, তরমুজে প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড এবং এন্টি অক্সিডেন্ট‌ রয়েছে। এমাইনো এসিড শরীরের খারাপ কোলেস্টরেল এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এন্টি অক্সিডেন্ট‌ শরীরের অলরেডি জমে থাকা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র তরমুজ খেয়েই শরীরের সমস্ত অতিরিক্ত ওজন বা চর্বি কমানো সম্ভব নয়। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

১১-তরমুজের অন্যান্য উপকারিতা

উপরোক্ত উপকারিতা ছাড়াও তরমুজ এর আরো অন্যান্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন:

  • তরমুজ কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারণ এটি মূত্র থলিকে বর্জ্যমুক্ত করতে সাহায্য করে।
  • আবার আমরা আগেই জেনেছি তরমুজে লাইকোপিন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। আর এই উপাদানটি ক্যালসিয়ামের একটি অন্যতম উৎস, যেটা আমাদের দাঁত এবং হাড়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • যৌন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে তরমুজ। টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক বলেছেন, যে সমস্ত ব্যক্তিদের যৌন শক্তি দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ঔষধের মতো কাজ করে। কারণ, তরমুজে সিট্রোলিন নামক একটি অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এই উপাদানটি যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই উপকারী।
  • এছাড়াও, এটি মাংস পেশির ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
তরমুজ এর উপকারিতা

অপকারিতা

উপরোক্ত আলোচনায় তরমুজ এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। কিন্তু অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে আপনার শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যেমন:

  • অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাস, পাতলা পায়খানা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা মূলত লাইকোপিনের কারণে হয়ে থাকে।
  • আবার, আমরা আগেই জেনেছি তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। যেটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু পটাশিয়াম অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি তরমুজ কিডনির জন্যে অনেক উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত তরমুজ খাইলে কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে, হাত-পা ফুলে যেতে পারে, শরীর দুর্বল লাগতে পারে। কারণ তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে। আর শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে সোডিয়ামের লেভেল কমে যায়। ফলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
  • তরমুজে প্রচুর পরিমাণ শর্করা থাকে, তাই এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ নয়।
  • এছাড়াও, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তরমুজ খাওয়ার পর এলার্জি, চুলকানি, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তাই তরমুজ অবশ্যই পরিমাণ মতো খান, যতটুকু আপনার শরীরের জন্য উপকারী।

তরমুজের বিভিন্ন মজাদার রেসিপি

তরমুজ সাধারণত আমরা টুকরা করে কেটে নরমালি খেয়ে থাকি। কিন্তু তরমুজ দিয়ে বিভিন্ন মজাদার রেসিপিও তৈরি করা যায়। চলুন তাহলে এখন তরমুজের কিছু মজাদার রেসিপি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি-

  • তরমুজের লাড্ডু
  • তরমুজের পুডিং।
  • তরমুজের সালাত।
  • তরমুজের আইসক্রিম ইত্যাদি।

এছাড়া তরমুজের বিভিন্ন সুস্বাদু জুসও তৈরি করতে পারেন। যেমন:

  • তরমুজের লেমোনেড,
  • তরমুজের অরেঞ্জ জুস,
  • সরাসরি তরমুজের জুস,
  • তরমুজের স্মুদি ইত্যাদি।

সামারি

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। আমরা এটাও জেনেছি তরমুজ খুবই উপকারী একটি ফল। কিন্তু তরমুজ খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

কারণ তরমুজ এর উপকারিতা এর পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার পরে যদি কোন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment