আনারসের খুব গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

(আনারসের বা আনারস খাওয়ার উপকারিতা)

আনারস এক প্রকারের গুচ্ছফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম, Ananas comosus (L.) Merr. এটার অন্যান্য আরো অনেক নাম আছে, যেমন: Bahunetraphalam, Anannas, Anamnasam, Ananus, ইত্যাদি। ধারণা করা হয়, আনারসের আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ।

আনারস মিষ্টি, রসালো ও তৃপ্তিকর সুস্বাদু ফল যা মানব দেহের জন্য অনেক উপকারি। আনারস বহু শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যগত ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, আনারসের মতো উদ্ভিদজাত খাবারগুলো স্থূলতা, সামগ্রিক মৃত্যুহার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।

পাশাপাশি, এটি কোলেস্টেরল এবং চর্বি মুক্ত। তাই আজ আমরা আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। চলুন তার আগে আনারসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে একটু জেনে নিই।

আনারসের পুষ্টিগুণ

আনারস খাওয়ার উপকারিতা

প্রতি ১০০ গ্রাম বা ৩.৫ আউন্স আনারসের পুষ্টিমান নিম্নে তুলে ধরা হল

  • নাম – পরিমান
  • শক্তি – ২০৯ কিজু (৫০ kcal),
  • শর্করা – ১৩.১২ g,
  • চিনি – ৯.৮৫ g,
  • খাদ্য আঁশ – ১.৪ g,
  • স্নেহ পদার্থ – ০.১২ g,
  • প্রোটিন – ০.৫৪ g,
  • থায়ামিন (বি১) – ৭%০.০৭৯ মিগ্রা,
  • রিবোফ্লাভিন (বি২) – ৩%০.০৩২ মিগ্রা,
  • নায়াসিন (বি৩) – ৩%০.৫ মিগ্রা,
  • প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) – ৪%০.২১৩ মিগ্রা,
  • ভিটামিন বি৬ – ৯%০.১১২ মিগ্রা,
  • ফোলেট (বি৯) – ৫%১৮ μg,
  • কোলিন – ১%৫.৫ মিগ্রা,
  • ভিটামিন সি – ৫৮%৪৭.৮ মিগ্রা,
  • ক্যালসিয়াম – ১%১৩ মিগ্রা,
  • লৌহ – ২%০.২৯ মিগ্রা,
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৩%১২ মিগ্রা,
  • ম্যাঙ্গানিজ – ৪৪%০.৯২৭ মিগ্রা,
  • ফসফরাস – ১%৮ মিগ্রা,
  • পটাসিয়াম – ২%১০৯ মিগ্রা,
  • সোডিয়াম – ০%১ মিগ্রা,
  • জিংক – ১%০.১২ মিগ্রা,
  • পানি – ৮৬.০০ g,

আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১.হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাংগানিজ রয়েছে। আমরা জানি, ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য খুবই উপকারী এবং ম্যাংগানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। এছাড়া, ম্যাঙ্গানিজ কানেক্টিভ টিস্যুকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।

এক কাপ আনারসের জুস আপনার দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। আবার আনারসে জিংক এবং তামা বিদ্যমান রয়েছে। আর ম্যাগাজিনের সাথে জিংক, তামা এবং ক্যালসিয়াম মিলিত হয়ে হাড়ের জন্য সুপার স্বাস্থ্যকর ফুডে পরিণত হয়।

এছাড়া আনারসে ব্রোমেলাইন নামের একটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রোমেলেন সম্পূরকগুলি পিঠের নীচের অংশে অস্টিওআর্থারাইটিস কমাতে নিয়মিত ব্যথার ঔষধের মত কাজ করে।

পাশাপাশি, একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই উপাদানটি তরুণাস্থি টিস্যুর অবক্ষয় এবং অস্টিওআর্থারাইটিসের সাথে সম্পর্কিত প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

২.প্রদাহ ও ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে

আমরা আগেই জেনেছি, আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ব্রোমেলেন রয়েছে। এই এনজাইম গুলো শরীরের প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা তৈরি করে। আবার, এই ব্রোমেলেনে প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যথা উপশমকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাইনোসাইটিস বা আঘাত পাওয়া, যেমন মচকে যাওয়া বা পোড়া প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, ব্রোমেলেনের মতো প্রোটিসগুলি ক্ষতিগ্রস্ত পেশী টিস্যুর চারপাশে প্রদাহ কমিয়ে কঠোর ব্যায়ামের পরে পেশী পুনরুদ্ধারের গতি আনতে সাহায্য করে। 1960 দশকের বহু গবেষণায় দেখা গেছে, বাতের সাথে যুক্ত প্রদাহজনিত ব্যথার উপশমে ব্রোমেলেন অনেক কার্যকরী। পাশাপাশি ভিটামিন সিও প্রদাহ এবং ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।

৩.ওজন কমাতে সাহায্য করে

শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, আনারস ওজন কমাতেও সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন কমাতে প্রচুর ফল এবং শাকসবজি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে আনারস হতে পারে আপনার খুব ভালো বন্ধু। কারণ আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে পাশাপাশি, ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণও অনেক কম।

এক টুকরো আনারসে মাত্র 42 ক্যালরি থাকে, যার মধ্যে মাত্র চার শতাংশ কার্বোহাইড্রেট। পাশাপাশি, এর এনজাইম গুলি চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া,‌ আনারসে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের ফাইবার রয়েছে, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৪.ব্রণ ও দাগ দূর করতে সাহায্য করে

আমরা আগেই জেনেছি আনারসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। আর ভিটামিন সি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন সি ছাড়াও এটাতে রয়েছে, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্লাস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যেগুলো ত্বককে বিভিন্ন ভাবে উপকার করে। যেমন: ব্রণ, ডার্ক স্পট, ত্বকের জ্বালাপোড়া, দৃশ্যমান সান স্পট এবং অমসৃণ ত্বকের টোন নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাশাপাশি, আনারসে উপস্থিত প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককের কুঁচকানো ভাব এবং বয়সের ছাপ নিরাময় করতে সাহায্য করে। আবার, আনারসে উপস্থিত অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ত্বকের কালো দাগ দূর করতে খুবই উপকারী। এছাড়া, প্রতিদিন এক গ্লাস আনারসের জুস আপনার ত্বককে ভালভাবে হাইড্রেটেড এবং পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করতে পারে।

৫.চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ উপকারী

আনারস চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস মানুষের ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। আর এই রোগের বৈশিষ্ট্য হলো, চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং রোগী ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়। আবার, বয়স বেড়ে গেলেও অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগটি দেখা যায়।

আর বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন আনারস খাওয়ার মাধ্যমে এই রোগের সম্ভাবনা ৩০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে চোখের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। কারণ আনারসে ভিটামিন সি, বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং এই রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৬.ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে

বিশেষজ্ঞদের মতে, আনারসে এমন অসংখ্য যৌগ রয়েছে, যেগুলোর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। যখন আমরা কোন খাবার খাই, তখন আমাদের শরীর প্রাকৃতিক নিয়মে এই খাদ্য কনা গুলোকে ভেঙ্গে দেয়। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিকেলস নামক একটি অনু তৈরি হয়। যেটা ক্যান্সার বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ।

আনারসে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ভিটামিন এই ফ্রি রেডিক্যালস ধ্বংস করতে ও সেল ড্যামেজ রোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এই উপাদানগুলি শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে এবং শরীরকে টনিক্স গ্রহণ বন্ধ করতেও সাহায্য করে।

এছাড়া, আমরা আগেই জেনেছি আনারসে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপাদান রয়েছে, এই উপাদানটির মধ্যে প্রদাহ-বিরোধী ক্রিয়া, অ্যান্টিক্যান্সার, ফাইব্রিনোলাইটিক প্রভাব, এবং ইমিউনোমোডুলেটরি প্রভাব রয়েছে। আবার আমাদের শরীর তার কোন জৈবিক ক্ষতি ছাড়াই এই ব্রোমেলেন শোষণ করতে পারে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে মৌসুমী ফল আনারস খাইতে পারেন।

৭.পুষ্টির অভাব পুরন করতে সাহায্য করে

আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস,ভিটামিন বি 6, কপার, থায়ামিন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন এবং আয়রন রয়েছে। এসব উপাদান গুলো আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে আনারস খাইলে দেহে এই সব পুষ্টির অভাব দূর করা সম্ভব।

৮.হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

হজম শক্তি ভালো রাখতে আনারসের গুরুত্ব অনেক। এই ফলটিতে ব্রোমেলেন নামক একটি হজম বৃদ্ধি কারক গ্রুপ রয়েছে, যেগুলো হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে সাহায্য করে।

এই ব্রোমেলেন প্রোটিজ হিসাবে কাজ করে, যেটা প্রোটিন (যেমন অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ছোট পেপটাইড ইত্যাদি) অণুগুলিকে তাদের বিল্ডিং ব্লকে ভেঙে দেয় এবং পাকস্থলীর এসিডিটিক পরিবেশ এবং ছোট অন্ত্রের ক্ষারীয় অবস্থা, উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় থাকে।

এছাড়াও আনারসের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার হয়েছে যেগুলো হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খাইতে পারেন।

৯.দাঁতের যত্নে বেশ উপকারী

হাড়ের পাশাপাশি দাঁত এবং মাড়ির যত্নেও আনারসের গুরুত্ব অনেক।দাঁত এবং হাড় ক্যালসিয়াম দিয়ে তৈরি আর আনারস ক্যালসিয়ামের একটি বড় উৎস।

এছাড়াও এটাতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ যা হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে আনারস। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

১০.ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। আর আমরা আগেই জেনেছি ভিটামিন ‘সি’ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। দেহের তৈলাক্ত ত্বক সহ, ব্রণ এবং সমগ্র রূপলাবণ্যে আনারসের উপকারিতা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। ভিটামিন ‘সি’ সূর্য এবং দূষণের কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় এটার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, বলিরেখা কমাতে এবং সামগ্রিক ত্বকের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে।

আর যখন প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন সি, খাওয়া হয় বা প্রয়োগ করা হয় তখন এটার কার্যকারিতা আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, আনারসে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন রয়েছে, যেগুলো ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। আবার, ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১১.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

পুষ্টিবিদদের মতে, আনারসে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীর ফিট ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আরো রয়েছে, পটাশিয়াম, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, খনিজ, ইত্যাদি এগুলো সামগ্রিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

পাশাপাশি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আবার আনারসে ব্রোমেলেন নামক এক ধরনের প্রদাহ বিরোধী উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটিও শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

আনারস খাওয়ার উপকারিতা

সাবধানতা

আমরা আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনেছি। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটার কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। যেমন: আনারসে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে, যেটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সপ্তাহে দুইবারের বেশি আনারস না খাওয়াই ভালো।

যাদের এলার্জি বা চুলকানির সমস্যা আছে তাদের বেশি আনারস না খাওয়াই ভালো। আবার, কিছু লোক দাবি করেন যে, বেশি পরিমাণে কাঁচা আনারস খাইলে বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া হতে পারে। তবে এটার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

তাই যখন আনারস নির্বাচন করবেন, তখন পাকা বা হলুদ রঙের আনারস নির্বাচন করুন। এছাড়াও আনারস রক্ত তরল করতে সাহায্য করে। তাই আপনার যদি এই ধরনের কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আনারসকে এড়িয়ে চলুন।

দুধ আর আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায়

দুধ আর আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায়

“দুধ আর আনারস একসাথে খেলে মানুষ মারা যায়”। মানুষের কাছে বিশেষ করে গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে এই কথাটা খুবই পরিচিত। বর্তমান বিজ্ঞানের এই বিষয়ে মতামত কি? বারডেম হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, ‘দুধ আর আনারস একসঙ্গে খাইলে মানুষ মারা যায় এই কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন। এটি একটি প্রচলিত কুসংস্কার মাত্র।

আবার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ.বি.এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খাইলে বিষক্রিয়া হয়ে মানুষ মারা যায় এই কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। এগুলো এক ধরনের ফুড ট্যাবু বা খাদ্য কুসংস্কার মাত্র।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইন্দোনেশিয়ায় বিখ্যাত এক ধরনের চিজ বানাতে আনারস আর গরুর দুধ একসাথে ব্যবহার করা হয়। সেখানে এটি খেয়ে কেউ মারা গেছে বলে এখনো শোনা যায়নি।

আনারস আর দুধ একসাথে খাইলে বদহজম, পাতলা পায়খানা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, এসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তবে কেউ যদি নষ্ট দুধের সাথে আনারস খায়, তাহলে সেখানে সমস্যা জটিল হতে পারে।

কারণ নষ্ট দুধের মধ্যে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেগুলো আনারসের ব্রোমেলেইনের সাথে মিশে বিষ বিষক্রিয়াও হতে পারে। তবে দুধ আর আনারস একসাথে খাইলে মানুষ মারা যায় এমন প্রমান এখনো পাওয়া যায়নি।

সামারি

আমরা আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিস্তারিত জেনেছি। এটা কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে, তাই আনারস খাওয়ার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন।

এছাড়া, আনারস আর দুধ নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই আজ থেকেই আপনার সুবিধামতো আনারস খাওয়া শুরু করতে পারেন।

Leave a Comment