কম ঘুমের সব থেকে ক্ষতিকর দিক বা প্রভাব গুলো কি

কম ঘুমের ক্ষতিকর দিক বা প্রভাব

ঘুম মানব জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই‌ সময় সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সব বন্ধ থাকে। সকল স্তন্যপায়ী, পাখি, বহু সরীসৃপ, উভচর এবং মাছের মধ্যে এই ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ঘুমানোর কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি কিন্তু এটা নিয়ে বর্তমানেও গবেষণা চলছে।

তবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।

কিন্তু ‘দ্য স্লিপ কাউন্সিলের’ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বা তার চেয়ে কম ঘুমান। আর গবেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ৬ ঘণ্টার কম সময় ঘুমালে শরীরের একাধিক ক্ষতি হয়।

পাশাপাশি, দীর্ঘদিন ধরে ৬ ঘণ্টা বা তার কম সময় ঘুমালে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবার, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা দিনে আট ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ বাড়ে যায়।

চলুন তাহলে কম ঘুমের ক্ষতিকর দিক বা প্রভাব গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-

কম ঘুমের ক্ষতিকর দিক

1-স্মৃতিশক্তি লোপ পায়

যদি স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে চান, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান। কেননা কম ঘুম মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তিকে নষ্ট করে দেয়। ফলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে। যেটা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এই ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে পড়ে। ফলে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।

আবার, কম ঘুম আমাদের যেকোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয় ও শিখন পদ্ধতিকে ধীর করে দেয়। পাশাপাশি ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতি একত্রিত করনে ব্যস্ত থাকে, তাই কম ঘুমের ফলাফল হয় বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতি যা ফলশ্রুতিতে আমাদেরকে করে তোলে ভুলোমনের অধিকারী।

এছাড়াও, মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না পেলে অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, হ্যালুসিনেশন, স্মৃতিভ্রংশের মতো একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি, কম ঘুমালে মেজাজ খিটখিটে থাকে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পাওয়ায় নতুন কোনো তথ্য আমাদের মস্তিষ্ক নিতে পারে না। মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয়, অনেকে সাময়িক স্মৃতিভ্রষ্টও হতে পারে।

2-ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়

রাতে উপযুক্ত ঘুম শুধুমাত্র আপনার শরীরকেই ভাল রাখে তা-নয়, এটা আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। কারণ ঘুমের সময় শরীর তার মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে নতুন কোষের সংস্থাপন করে। তাদের পুষ্টির জোগান দেয়। পাশাপাশি, নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুম শরীরের ৬০% পর্যন্ত ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে।

আবার, নির্দিষ্ট পরিমাণের কম ঘুমাইলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ত্বকে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়াগুলো বাড়াতে শুরু করে। তখন ত্বকে ব্রণ, পিম্পল ইত্যাদি দেখা দেয়।

এছাড়া, ঘুমের অভাবের কারণে ত্বকের প্রদাহ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়, চোখ ফোলা বা চোখ ডেবে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও কম ঘুমের কারণে বিভিন্ন রকম হরমোনাল সমস্যা হয়। যেগুলো সরাসরি ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে।

3-উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা ঘুম কম হলে বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। যদি আপনার রক্তচাপের সমস্যা নাও থাকে, তাহলেও হঠাৎ করেই এটা বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করে, বেড়ে যায় উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো বিভিন্ন সমস্যা।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের মতে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুম ছাড়া একরাত থাকা মানেই, পরের দিন জুড়ে সমস্ত রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলা। এছাড়াও, গবেষকরা দেখেছেন যাদের ঘুমোতে ১৪ মিনিটের বেশি সময় লাগে, তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ৩০০ শতাংশ বেশি থাকে।

চিকিৎসকদের মতে, গভীর ঘুম রক্তচাপের প্রাকৃতিক চিকিৎসক। কারণ গভীর ঘুমের সময় হার্টবিটরেট কমে আসে, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম না হলে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে পারেনা। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

4-হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি পায়

স্বল্প ঘুমের অর্থ হচ্ছে শরীর তার পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছে না। বিশ্রামহীন শরীরকে দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম রাখতে বিশেষ কিছু রাসায়নিকের নিঃসরণ হয়। যার ফলে সাময়িকভাবে হৃদকম্পন ও ব্লাড প্রেসার কমে যায়। কিন্তু এটা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে হৃদকম্পন ও ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

১.৬ বিলিয়ন মানুষের ওপর দুই বছর ধরে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ডেলাইট সেভিং টাইম চলাকালে যখন মানুষের ঘুমের সময় এক ঘণ্টা কমে যায়, তখন হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ ২৪% বেড়ে যায়। ঘুমের স্বল্পতা প্রাণঘাতী স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ২০০% বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও, শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ বেড়ে যায় যেটা ডায়াবেটিস ও হার্টের বিভিন্ন রোগের কারণ। আমাদের এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুম না হলে বা কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা বাড়তে থাকে।

5-শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়

কম ঘুমের অন্যতম একটি ক্ষতিকর প্রভাব বা দিক হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ঘুম মূলত আমাদের শরীরের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ গুলো কাজ করতে থাকে।

কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’ গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। পাশাপাশি, ঘুমানোর সময়, আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং কোষ তৈরি হয়, যা আক্রমণকারী ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রাত জাগেন তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শারীরিক স্থূলতা এমনকি স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আরও কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যতো বেশি রাত জাগে ততই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

আবার, প্রায় দশ হাজার ব্রিটিশ ছাত্রের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ৫ ঘন্টা বা তার কম সময় ঘুমায়, তাদের হঠাৎ করে মৃত্যুর আশঙ্কা সাধারণ মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশী থাকে।

6-হজমের সমস্যা বৃদ্ধি পায়

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যাও। আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলি উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়। ফলে হজমের নানা সমস্যা শুরু হয়।

এছাড়াও, দীর্ঘদিন রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তাই হজম ক্রিয়া ভালো রাখতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন।

7-অ্যাথারোক্লেরোসিস রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়

অ্যাথারোক্লেরোসিস এমন একটি রোগ যেটা শরীরের ধমনীর মধ্যে প্রাচীর তৈরি করে। সাধারণত চর্বি, কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে ধমনীর মধ্যে এই প্রাচীর তৈরি হয়। মূলত হার্ট থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবহনের কাজ করে এই ধমনী।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, কম ঘুম শুধু হার্টের উপরেই নয়, বরং তা শরীরে অ্যাথারোক্লেরোসিস সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে। তাই ৬ ঘণ্টার কম ঘুমানোর ফলে বিজ্ঞানীরা ধমনীতে যে প্রাচীর তৈরি হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন, সেটি মানুষের জীবনের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।

এই ধরনের প্রাচীরের কারণে ধমনী আগের তুলনায় অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে যায়। যেটা রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে। ধমনীতে প্রাচীর তৈরির ফলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হলে তা স্ট্রোক, হজমে সমস্যা, স্থূলতা, ব্যাথা এমনকি হূদরোগ পর্যন্ত হতে পারে।

8-শারীরিক ওজন বেড়ে যায়

বেশি ঘুমোলে ওজন বাড়ে, তা আমরা সবাই জানি। তাই অনেকেরই ধারণা যে কম ঘুমালে নিশ্চয়ই ওজন কমে। কিন্তু সঠিক উত্তরটা ঠিক এর উল্টো। বেশি ঘুমের মত কম ঘুমেও ওজন বেড়ে যায়। কারণ, ঘুমের অভাব আমাদের ক্ষুধার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ও আকর্ষণ বাড়ায় হাই ফ্যাট খাবারের প্রতি।

2014 সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ছয় ঘণ্টা বা তার কম ঘুমায় তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা, যারা দিনে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমায় তাদের থেকে ৩০% বেশি। আমাদের শরীরে লেপটিন নামক একটি হরমোন আছে। যেটা পেট ভরা আছে কি-না সেটা জানিয়ে দেয়। কম ঘুমালে এই হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এতে ক্ষুধা লাগে বেশী।

এটি খাওয়ার পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। এটি ওজন বাড়ার অন্যতম একটি কারণ। অন্যদিকে, ঘুমের অভাব স্ট্রেস হরমোন ও কর্টিসল নামক একটি বায়োকেমিক্যাল-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। যেটা ক্ষুধা উত্তেজক। এই দুটি রাসায়নিকের সংমিশ্রণ ওজন এবং স্থূলত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন।

9-যৌন শক্তি কমে যায়

কম ঘুম পুরুষের টেস্টোসটেরনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। এটি যৌন জীবনকে ব্যাহত করে। তাই যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভালোভাবে ঘুমানোও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম ঘুমের ফলে শরীরে সেক্স হরমোনের ক্ষরণ কমতে থাকে।

শুধু তাই নয়, কমে যায় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হরমোনও। এটি যৌন চাহিদাকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া একটানা ঘুমের অভাবে দেহে হরমোনের ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

অনিয়মিত ঘুম পুরুষ দেহে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। যেটা প্রজনন ক্ষমতার উপরও প্রভাব ফেলে। আর নারীদেহে ঘুমের অপ্রতুলতা শরীরের জৈবিক ছন্দ ব্যাহত করে হরমোন ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটায় ও যৌনতাড়না কমিয়ে দেয়।

আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে। কম ঘুমের ফলে স্পার্ম কাউন্ট কম হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, ডেনমার্কের কিছু মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যারা নির্দিষ্ট পরিমাণের কম ঘুমান, তাদের প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষের স্পার্ম কাউন্ট কমে গেছে। যার ফলে সন্তান উৎপাদননে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আবার, মাসিক সাময়িকী ‘জিকিউ’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকেরা জানান, এক বছর ধরে তাঁরা মোট ৭০০ নিউইয়র্কভিত্তিক দম্পতির দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর নজর রেখেছেন।

এই গবেষকেরা দেখেছেন, এইসব দম্পতির মধ্যে যেসব পুরুষ রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের প্রজননক্ষমতা দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো পুরুষদের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম। তাই যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস করুন।

10-ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়

অপর্যাপ্ত ঘুম আর ক্যান্সারের মধ্যে সূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে অন্ত্রের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের সাথে। এ সম্ভাবনা এতই বেশি যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেকোনো নাইটশিফটের কাজকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী চাকরি হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কারণ, মাত্র এক রাত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমালে শরীরের ক্যান্সারপ্রতিরোধী কোষগুলোর ৭০ শতাংশ মরে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও আরোগ্যলাভে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ঘুমের সময় শরীরে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা কোষক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

কম ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব

সামারি

উপরোক্ত প্রভাব গুলো ছাড়াও কম ঘুমের আরো অনেক অন্যান্য ক্ষতিকর দিক বা প্রভাব রয়েছে। তাই এই সমস্ত সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রতিদিন অবশ্যই অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। তবে একটা কথা মাথায় রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট।

কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ঘুম মোটেই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। উল্টে মারাত্মক ক্ষতিকর। (মাত্র অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো জানতে এখানে ক্লিক করুন) তাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু জীবনের জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন। প্রতিদিন রাতে আগে আগে ঘুমাতে যান, ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। আর দীর্ঘদিনে অনিদ্রা বা কম ঘুমের সমস্যা থাকলে ইচ্ছেমতো ওষুধ না খেয়ে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

টানা ১৬ ঘণ্টা নির্ঘুম কাটালেই মানুষ মানসিক ও শারীরতাত্ত্বিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। ১৯ থেকে ২০ ঘণ্টা টানা না ঘুমিয়ে থাকলে কারো মানসিক ও শারীরিক অবস্থা মাতালের সমতুল্য হয়ে যায়। আর এসব কাটিয়ে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন দিনে গড়ে আট ঘণ্টা ঘুম।

১৫ জন লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে মাত্র এক রাত ঘুম না হলেই মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় শুরু হয়। ১৭৪১ জন নারী এবং পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যারা ১০ থেকে ১৪ বছর ধরে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমান তাদের মধ্যে মারাত্মক ধরনের মৃত্যুহার বেশি থাকে। তাই, আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থাকে তাহলে দেরি না করে আজই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment