Healthy and nutritious food

শর্করা জাতীয় খাবার: পুষ্টির এক অপরিহার্য উপাদান

(শর্করা জাতীয় খাবার কি কি)

শর্করা জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। এগুলি আমাদের শরীরের প্রধান জ্বালানি সরবরাহ করে এবং আমাদের বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। যেমন: মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, পেশী বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।

শর্করার শ্রেণিবিন্যাস

শর্করা জাতীয় খাবারকে প্রধানত দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। (১) সরল শর্করা (২) জটিল শর্করা

সরল শর্করা: এগুলি ছোট অণুযুক্ত শর্করা যা সহজেই শরীরে শোষিত হয়। সরল শর্করায় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় চিনি ও অন্যান্য কেমিক্যাল যোগ করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সরল শর্করা পরিশোধিত হওয়ার কারণে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবণের উপস্থিতি খুব কমে যায়। সরল শর্করার মধ্যে রয়েছে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্যালাক্টোজ। এছাড়া, ফল, মধু এবং টেবিল চিনিতে সরল শর্করা পাওয়া যায়।

জটিল শর্করা: এগুলি বড় অণুযুক্ত শর্করা যা শরীর দ্বারা ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। একজন মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ শর্করা থেকে আসা উচিত। জটিল শর্করা ওজন হ্রাস করতে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে, কোলেস্টরল ও রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।জটিল শর্করার মধ্যে রয়েছে স্টার্চ এবং ফাইবার। শস্য, ডাল, বাদাম এবং শাকসবজিতে জটিল শর্করা পাওয়া যায়। জটিল শর্করা থেকে দেহে ধীরে ধীরে শক্তি নির্গত হয়।

শর্করা জাতীয় খাবারের উদাহরণ

ফলের মধ্যে রয়েছে: আপেল, কলা, নাশপাতি, বেরি, মাল্টা, আঙ্গুর, গাজর, খেজুর, আঙ্গুর, আপেল, বেল, তরমুজ, আম, কলা, কম লালেবু এছাড়া বিভিন্ন পাকা ফলেও শর্করা পাওয়া যায়।

শস্য দানার মধ্যে রয়েছে: বাদামী চাল, ওটমিল, বাদামী রুটি, কুইনোয়া, ভূট্টা, গম, বাজরা ইত্যাদি।

ডালিমের মধ্যে রয়েছে: মসুর ডাল, মুগ ডাল, চন ডাল, কলাই ডাল ইত্যাদি।

শাকসবজির মধ্যে রয়েছে: আলু, মিষ্টি আলু, শসা, গাজর, কুমড়া, বীট, আলু, ওলকপি, কচু, বীট, থোড়, শসা, টমেটো, পুদিনা, ধনেপাতা, পালংশাক, ব্রকলি, লাউ, পেঁপে, ফুলকপি ইত্যাদি।

অন্যান্য: রুটি, মুড়ি, চিড়া,পাইরুটি, চিনি, গুড়, কিশমিশ, এপ্রিকট, মিছরী ইত্যাদি।

মানবদেহে শর্করার প্রয়োজনীয়তা

  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন 130 গ্রাম শর্করা প্রয়োজন।
  • শিশুদের বয়স ও শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে 80-120 গ্রাম শর্করা প্রয়োজন।
  • আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের শর্করা জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে।

শর্করা জাতীয় খাবারের উপকারিতা

শক্তির প্রধান উৎস: শরীরের বিভিন্ন জৈবিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে: মস্তিষ্কের প্রধান জ্বালানি হিসেবে কাজ করে এবং স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

পেশী বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণ: পেশী টিস্যুর গঠন ও বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হজমশক্তি উন্নত করে: খাদ্যতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে।

অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণের অপকারিতা

ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে: অতিরিক্ত শর্করা শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে: দীর্ঘমেয়াদী অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণের ফলে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে: উচ্চ রক্তচাপ, ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা বৃদ্ধি এবং HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

দাঁতের ক্ষয় হতে পারে: মুখের ব্যাকটেরিয়া শর্করা ভেঙে অ্যাসিড তৈরি করে যা দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হতে পারে।

শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • সম্পূর্ণ শস্য এবং ফল এবং শাকসবজি বেছে নিন।
  • আপনার খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ান।
  • আপনার ক্যালোরি গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করুন।

শেষ কথা

শর্করা যেমন শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান তেমনি এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। তাই শর্করা গ্রহণের সময় অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজনীয় শর্করা গ্রহণ করুন এবং ক্ষতিকর শর্করা ত্যাগ করুন। এছাড়াও, আপনার যদি আপনার ডায়েট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে একজন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ানের সাথে কথা বলুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button