দড়ি লাফের খুব কার্যকরী ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
(দড়ি লাফের স্বাস্থ্য উপকারিতা)
স্কিপিং বা দড়ি লাফ আমাদের কাছে খুব পরিচিত একটি নাম। সাধারণত বাচ্চারা এই খেলাটি করে থাকে। এটি বাচ্চাদের কাছে একটি খেলা হলেও বড়দের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম। স্কিপিং বা দড়ি লাফ ব্যায়ামটি করতে তেমন কোন খরচ হয় না। তাই এটি সবাই করতে পারে। স্কিপিং করতে আলাদাভাবে কোন প্রশিক্ষণ নিতে হয় না। একটু ভালোভাবে জেনে নিলেই স্কিপিং করা যায়।
এটাকে একটি ভালো কার্ডিও ও হাই ইন্তেন্সিভ ইন্টারভেল ট্রেইনিং বলা হয়। স্কিপিং অ্যারোবিক ব্যায়াম গুলোর মধ্যে একটি ব্যায়াম। 1 ঘন্টা স্কিপিং করলে 700 ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব।আমরা যদি প্রতিদিন 20 থেকে 30 মিনিট স্কিপিং করি তাহলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, 10 মিনিট স্কিপিং করলে যে শারীরিক পরিশ্রম হয়, তা আট মাইল দৌড়ানোর সমান। এছাড়া আমরা নিয়মিত স্কিপিং করলে শারীরিকভাবে আরো অনেক উপকার পেতে পারি।
তাই আজ আমরা জানবো: স্কিপিং বা দড়ি লাফ কত প্রকার ও কি কি? দড়ি লাফের উপকারিতা কি? স্কিপিং করলে মেয়েদের জরায়ু নিচে নেমে যায় কি-না? এই রোগের লক্ষণ গুলো কি? এবং স্কিপিং করার সময় কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
চলুন তাহলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-
স্কিপিং কয় প্রকার ও কি কি
স্কিপিং খুব ভালো মানের একটি ব্যায়াম এটা অনেক ভাবে প্রমানিত হয়েছে। স্কিপিং বা দড়ি লাফের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে যেমন:-ডাবল জাম্প, ক্রাস জাম্প, এক পায়ে লাফানো, ফ্রন্ট ব্যাক ক্রস, ডাবল আন্ডার ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে সব থেকে উপকারী এবং পরিচিত ব্যায়ামগুলো হল 1- ডাবল জাম্প, 2- ক্রস জাম্প, 3- এক পায়ে লাফানো।
(1) ডাবল জাম্প:-ডাবল জাম্প হলো সবথেকে সহজ ও সাধারন পদ্ধতি। এটা করতে মাথার উপর দিয়ে দড়ি নিয়ে লাভ দিয়ে পায়ের নিচ দিয়ে বার করতে হয়। এই সময় দুই পা একত্রে উপরে তুলতে হয়। এই পদ্ধতিতে সবথেকে বেশি গতি চর্চা হয় এবং ক্যালোরি পোড়ে বেশি।
(2) এক পায়ে লাফ:- এই পদ্ধতিটি স্কিপিং দড়ির সাহায্যে এক পা-এক পা করে লাফাতে হয়। ঠিক দৌড়ানোর মত করে মেঝেতে একবারে একটা করে পা ফেলতে হবে। আর সেই সঙ্গে দড়িটাকে ব্যালেন্স করে ঘোরাতে হবে। এতে কোমরের মাংসপেশির খুব ভালো ব্যায়াম হয়। এটা অ্যাডভান্স স্কিপিং স্টাইল তাই ডাবল জাম্প এবং ক্রস জাম্প ভালো করে চর্চা করে এটা করা উচিত।
(3) ক্রস জাম্প:- এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে হলে দুই হাতকে পরস্পর বিপরীত দিকে নিয়ে দড়ি লাফ দিতে হবে। এটা একটি ইনটেনসিভ স্কিপিং স্টাইল তাই মাঝে মাঝে আপনাকে ব্রেক নিতে হবে।
এবার আসুন দেখা যাক স্কিপিং এর মাধ্যমে আমরা শারীরিকভাবে কি কি উপকার পেতে পারি।
স্কিপিং বা দড়ি লাফের উপকারিতা
1-ওজন কমাতে সাহায্য করে
দেহের চর্বি ঝরাতে এর জুড়ি নেই। দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সক্ষম। এক ঘন্টা স্কিপিং-এ 700 – 1300 পর্যন্ত ক্যালোরি পোড়ানো সম্ভব। শুনলে অবাক হবেন যে, ১০ মিনিট দড়ি লাফাতে আপনার যে শারীরিক পরিশ্রম হয়, তা মাত্র ৮ মিনিটে ১ মাইল দৌড়ানোর সমান।
পুরো শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা পেট যেটাই কমাতে চান, সেটা নিয়মিত স্কিপিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব। তাই আজই একটি স্কিপিং রোপ বা লাফানোর দড়ি বানিয়ে নিন বা কিনে নিন।
তবে প্রথমদিকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে যতোটা স্কিপিং করা সম্ভব, ততোটাই করুন। দম অনুযায়ী আস্তে আস্তে সময়টা বাড়ান। এভাবে নিয়মিত দড়িলাফের অভ্যাস গড়ে তুললে ওজন তো কমবেই, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণও। আবার, এটা মাংসপেশিকে টোন করতেও সাহায্য করবে।
2-মাংসপেশী মজবুত করে
শরীরের মাংস পেশি সচল রাখার জন্য এবং পুনরুজ্জীবিত করার জন্য দড়িলাফের কোন জুড়ি নেই। নিয়মিত স্কিপিংয়ের ফলে আপনার শরীরের ওপরের ও নিচের অংশ অর্থাৎ কোমর থেকে পায়ের পাতার মাংসপেশীর গঠন সুন্দর ও দৃঢ় হয়।
ওপরের অংশও বলিষ্ঠ হয় কারণ দড়ি লাফানোর জন্য আপনি আপনার হাত ও কাঁধ দুটোই ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি, এতে আপনার ফুল বডি ওয়ার্ক আউট হবে। এটা থাই টান টান করতেও খুব কার্যকরী।
আবার, শরীর টোন করতে অর্থাৎ পারফেক্ট শেপে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। Skipping-এর ফলে হিপ, পা, থাই – এসব অংশের মাসল শেপে চলে আসে, শুধু তাই না, শরীরের এই অংশের মাংসপেশিকে মজবুত করতেও সাহায্য করে লাফদড়ি ব্যায়াম। এছাড়াও যাঁদের হাতে ফ্যাট বা মেদ রয়েছে, তাঁরাও এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্কিপিং করলে শরীরে নিচের অংশ, বিশেষত পায়ের পেশীর কর্মক্ষমতা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরের উপরিঅংশে যত মাসল রয়েছে, তাদের সচলতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে সার্বিকভাবে দেহের কর্মক্ষমতা বাড়তে একেবারেই সময় লাগে না।
3-হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে
স্কিপিংয়ের ফলে আমাদের শরীরের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, এটি হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং অস্টিওপোরোসিস জাতীয় মারাত্মক সমস্যা থেকে দূরে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং জয়েন্টে কম চাপ সৃষ্টি করে। তাই দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং ভালো ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্কিপং-এর মতো কার্ডিও এক্সারসাইজ করলে বোন ডেনসিটি বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে জয়েন্টের সচলতাও এতটা বেড়ে যায় যে অস্টিওপরোসিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
প্রসঙ্গত, ৩৫ পেরতে না পেরতেই পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই হাড়ের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করে। তাই যারা ইতিমধ্যেই এই বয়সে পৌঁছে গেছেন, তাদের বেশি করে স্কিপং করার প্রয়োজন রয়েছে।
4-হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
হার্ট ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে নিয়মিত দড়ি লাফের অভ্যাস। দম বাড়াতে, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া ও ছাড়ার ক্ষেত্রে দড়ি লাফ বেশ কার্যকরী। স্কিপিং হার্ট ও সারা শরীরে বেশি রক্ত সরবরাহ করে। যেটা আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশের টিস্যুগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি-উপাদান পৌঁছে দেয়।
এছাড়াও, নিয়মিত এই শরীরচর্চাটি করলে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে আর্টারি এবং ভেইনের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে সারা শরীরের পাশাপাশি হার্টেও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ এতটা বেড়ে যায় যে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
পাশাপাশি, স্ট্যামিনাও চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।আবার রক্তের ক্ষতিকর চর্বি কমাতেও সাহায্য করে দড়িলাফ। দড়িলাফ দিলে রক্তের উপকারী চর্বি বাড়ে প্রচুর পরিমাণে। এই চর্বি হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেহেতু স্কিপিং-এর ফলে হার্ট বিট ফার্স্ট হয় তাই এটি করলে আপনাকে আলাদা করে কার্ডিও ভাস্কুলার এক্সারসাইজ করতে হবে না।
5-শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখে
দড়ি লাফের অভ্যাস আপনার শরীরকে আগের চেয়ে অনেক বেশি নমনীয় করে তোলে। পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের ভারসাম্য ও সমন্বয় রাখতে সাহায্য করে। এই ব্যায়াম হাত-পা একসাথে চালানোর ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রতঙ্গও মুভমেন্ট হয়। তাই সব অ্যাথলেটরাই স্কিপিং চর্চা করেন।
স্কিপিং করার সময় অনবরত লাফাতে হয়। ফলে শরীরের নিচের অংশের সচলতা এমনিতেই বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হাত, কাঁধ এবং অ্যাবডোমিনাল এরিয়ার কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকদের মতে সারাক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করার কারণে বেশিরভাগেরই শরীরের গঠন খারাপ হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও স্কিপিং খুবই উপকারী।
আসলে এই শরীরচর্চাটি করার সময় শরীর একেবারে সোজা থাকে, ফলে বডি পসচারে উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। স্কিপিংয়ের সময় যেহেতু আপনার মস্তিষ্কের দুটি অংশই সমানভাবে সক্রিয় থাকে, সেজন্য যে কোন কাজে আপনার মনোযোগও বাড়তে থাকে।
6-উজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করে
জামপিং রোপের সঙ্গে ত্বকের ভাল-মন্দের কি সম্পর্ক? আসলে এই শরীরচর্চাটি নিয়মিত ১৫ মিনিট করলেই এত মাত্রায় ঘাম হয় যে শরীর এবং ত্বকের অন্দরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
প্রসঙ্গত, আরেকভাবেও এই শরীরচর্চাটি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। কীভাবে? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে স্কিপং করার সময় সারা শরীরে রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হতে একেবারেই সময় লাগে না। যার প্রভাবে সৌন্দর্য বাড়তে শুরু করে। এতে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা, মসৃণতা ও সজীবতা বৃদ্ধি পায়।
7-একটি সহজ ব্যায়াম
এই এক্সারসাইজ করতে আপনাকে একেবারে পারদর্শী হতে হবে তা নয়। বিগিনার থেকে অ্যাডভান্স সবাই এটি করতে পারে। মাংসপেশি মজবুত করার ব্যায়াম করতে গিয়ে অনেকেরই অনেকসময় শরীরের নানা জয়েন্টে আঘাত লাগে। কিন্তু skipping করার ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা নেই।
কারণ, লাফদড়ি খুবই হালকা। যেহেতু বাইরের কোনও ওজন আপনার উপরে প্রয়োগ করা হচ্ছে না, ফলে আপনার শরীর তো মজবুত হচ্ছেই, সেটাও আবার, কোন রকম সমস্যা ছাড়াই!স্কিপিং রোপটি হাতের ব্যাগেও রাখতে পারবেন, তাই আপনার ব্যায়ামের রুটিন কখনোই মিস হবে না।
8-রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
যে কোন ব্যায়ামই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্কিপিংটা হতে পারে যে কোন খেলার বেশ সহজ বিকল্প। বেশি সময়েরও প্রয়োজন নেই এতে। কিন্তু, নিয়মিত দড়ি লাফের চর্চাতে আপনার শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যাবে এবং মনও থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত, চাঙ্গা, প্রাণবন্ত ও ফুরফুরে।
মানসিকতা নেতিবাচক থাকলে, তা হয়ে উঠবে ইতিবাচক। তাই আজ থেকেই স্কিপিংটা আপনার নিত্যদিনের চর্চার তালিকায় যোগ করে নিন এবং সুস্থ থাকুন।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ২০ মিনিট করে স্কিপং করলে মস্তিষ্কের অন্দরে বেশ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যেটা কগনিটিভ ফাংশনের উন্নতি ঘটতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধির বিকাশেও এই শরীরচর্চাটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
স্কিপিং করার সময় মেয়েদের জরায়ু কি নিচে নেমে যায়?
আমরা অলরেডি দড়ি লাফের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু প্রায় শোনা যায়, স্কিপিং ব্যায়াম মেয়েদের করা উচিৎ নয়। কারণ এতে না-কি মেয়েদের জরায়ু নিচের দিকে নেমে যায়। জরায়ু নিচে তখনি নেমে যেতে পারে, যখন যেসব লিগামেন্ট জরায়ুকে দেহের ভেতরে ধরে রাখছে সেগুলো অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যাবে এবং জরায়ুকে তার জায়গায় আটকে রাখতে পারবে না। সাধারণত এই লিগামেন্টগুলো দুর্বল হতে পারে কয়েকটি কারণে, যেমন:
জরায়ুর আশেপাশের লিগামেন্টে যদি নরমাল প্রেগন্যান্সি বা নরমাল ডেলিভারির সময় ড্যামেজ হয়। নরমাল গ্র্যাভিটি। বছরের পর বছর খুব হেভি মাসল ড্যামেজ নেয়া হলে। ইসট্রোজেন হরমোনের অভাব হলে। দীর্ঘদিন ধরে পেটে চাপ পড়ার মত রোগ যেমন কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে পানি জমে থাকলে। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে। ভারী জিনিস ওঠা নামা করালে ইত্যাদি।
মনে হতে পারে, ‘হেভি মাসল ড্যামেজ’ দড়ি লাফের কারণে হয়। কিন্তু আমেরিকান কাউন্সিল অফ এক্সারসাইজের মতে, দড়িলাফ দেহে হালকা জগিং-এর চেয়ে বেশি প্রেসার ফেলে না। এমনকি ফিট নারীরা প্রেগন্যান্সির সময়ও হালকা এক্সারসাইজ হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দড়িলাফ দিতে পারেন। স্বাভাবিক অবস্থায় এক্ষেত্রে রিস্ক-এর প্রশ্নই আসে না।
ফিটনেস এক্সপার্ট এবং ডাক্তারদের মতানুসারে, দড়িলাফ নিজে থেকে দেহের কোন ক্ষতি নারী-পুরুষ কারো ক্ষেত্রেই করে না। জরায়ুর ক্ষতি হওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা দড়িলাফের চেয়ে সাধারণ কাজকর্ম, যেমন, ভারী জিনিসপত্র তোলা, নামানো, খুব দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ওঠা- এসব বিষয়ে বেশি সতর্ক হতে বলেন।
তাই অযথা গুজবে কান দেয়ার দরকার নেই। আপনার জেন্ডার যাই হোক, অলরেডি হাড়ের সমস্যা, ডেলিভারিতে কমপ্লিকেশন থাকলেও খুব সহজেই নিজের ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিজের জন্য কোনটা ঠিক তা জেনে নিতে পারেন।
এই রোগের লক্ষণসমূহ
জরায়ু নিচে নেমে গেলে যে সমস্ত লক্ষণগুলো দেখে বোঝা যায়। তা হল- মনে হবে যেন পেটের ভিতরটা ভরে আছে বা চাপ অনুভব করবেন। কোন কিছু নিচের দিকে নেমে যাওয়ার মত অনুভূতি হতে পারে।
এছাড়া পিঠে ব্যথা, হাঁটতে কষ্ট হওয়া, প্রস্রাব বা পায়খানা করতে সমস্যা হওয়া, যৌন মিলনে ব্যথা পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।এই কারণগুলো দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
সাবধানতা
দড়ি লাফের উপকারিতা অনেক। কিন্তু, দড়ি লাফের সময় যে বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে সেগুলো হলো : একটি ভালোমানের রোপ কিনতে হবে। অনেক বলে থাকেন, খালি পায়ে স্কিপিং ভালো।
এতে পায়ের অনেক সমস্যাও ভালো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে খালি পায়ে স্কিপিং করলে পায়ে ব্যথা হতে পারে। তাই স্পোর্টস শু পরে স্কিপিং করাই শ্রেয়। অথবা কার্পেট বা ফোমের ওপরে স্কিপিং করা যেতে পারে।
মেয়েদের জন্য বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জন্য ভালো মানের স্পোর্টস ব্রা পরে স্কিপিং করা উচিত। প্রথমে ধীরে ধীরে স্কিপিং করে, পরে আস্তে আস্তে গতি বাড়াতে হবে। প্রথম বারেই ফুল গতিতে স্কিপিং করা ঠিক নয়। সমান জায়গায় স্কিপিং করবেন। উডেন ফ্লোর হলে ভালো হয়।অধিক উচ্চতায় লাফ দেওয়া ঠিক না, এতে করে জয়েন্টের অসুবিধে হতে পারে ।
প্রতিবার লাফের সময় হাঁটু কিছুটা বাঁকিয়ে রাখা উচিত । এটা Shock Absorber হিসেবে কাজ করবে এবং হাঁটুর উপর চাপ পড়বে না ।কনুই শরীরের কাছাকাছি রেখে, ঘাড় নরম করে, মাথা উঁচু ও পিঠ সোজা রাখা উচিত ।এটি একটি হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম তাই ওয়ার্ম আপ খুব জরুরী। প্রথমে ৫ মিনিট অবশ্যই ওয়ার্মআপ করতে হবে। বিরতি দিয়ে ব্যায়াম করা উচিত।
শেষ কথা
স্কিপিং সহজ এবং শূন্য খরচের কার্যকরি একটি ব্যায়াম। যেটা বাড়িতে বা যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময়ে করা যায়। প্রতিদিনই দড়িলাফ দিতে পারেন, চাইলে দুইবেলাও দিতে পারেন। জোড়া পায়ে দড়িলাফ দেওয়া ভালো, আবার এক পা এক পা করেও দিতে পারেন। যেভাবে সুবিধা মনে হয়, সেটিই চর্চা করুন।
সব বয়সী ব্যক্তিই দড়িলাফ দিতে পারেন, যদি কোনো অসুবিধার সম্মুখীন না হন। তবে প্রথমদিকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে যতোটা স্কিপিং করা সম্ভব, ততোটা স্কিপিং করুন। দম অনুযায়ী আস্তে আস্তে সময়টা বাড়ান।
আপনার স্বাস্থ্য ফিট রাখতে, ওজন কমাতে, শরীরের ঘাম ঝরাতে দড়ি লাফ খুব ভালো একটি ব্যয়াম। পাশাপাশি, স্কিপিং করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই মন মানসিকতাও ভালো থাকে। কারণ আমরা জানি সুস্থ শরীর সুস্থ মন।
রোগব্যাধি কমে গেলে মন থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত, চাঙ্গা, প্রাণবন্ত ও ফুরফুরে। সেই সাথে মানসিক অবসাদ, দ্বিধা সংকোচ সব চলে যেতে শুরু করবে। তাই আজ থেকেই প্রতিদিন কিছু সময় স্কিপিং করার চেষ্টা করুন।