আদার উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং খাওয়ার নিয়ম
(আদার উপকারিতা ও অপকারিতা)
আদা (Zingiber officinale) শুধুমাত্র একটি সুগন্ধযুক্ত মশলা নয় বা এটি শুধু রান্নার স্বাদই বৃদ্ধি করে তা-নয়, এটি অসাধারণ ঔষধি গুণাবলী সমৃদ্ধ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালী এবং ঔষধি ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদার মূল কাণ্ড, যা rhizome নামে পরিচিত, এগুলও বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তাই আজ আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে আদার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব-
স্বাস্থ্য উপকারিতা
হজমশক্তি উন্নত করে: আদায় থাকা জিঞ্জারল নামক উপাদান হজম রসের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে, পেটের গ্যাস, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি পেটের আলস্য কমিয়ে হজমশক্তি শক্তিশালী করে।
বমি বমি ভাব ও বমি কমায়: ভ্রমণজনিত বমি বমি ভাব, গর্ভাবস্থার বমি, কেমোথেরাপির সময় হওয়া বমি কমাতে আদা অত্যন্ত কার্যকর। এটি বমি বমি ভাবের সাথে জড়িত মাথাব্যথা ও পেট খারাপের সমস্যাও দূর করে।
এটি পেটের পেশী প্রশমিত করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ কমায়। এই কারণে, এটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ফোলাভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব দূর করতে খুবই কার্যকর।
ঠান্ডা লাগা ও কাশি দূর করে: আদার অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ঠান্ডা লাগা, কাশি, সর্দি দ্রুত নিরাময় করে। এটি গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট কমাতেও সাহায্য করে।
গাঁটজ্বালা ও ব্যথা কমায়: আদার প্রদাহ-বিরোধী গুণাবলী গাঁটজ্বালা, সন্ধিবাত, পেশী ব্যথা ও ব্যথার অন্যান্য রূপ কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রদহ কমিয়ে পেশীর নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।
মাসিকের ব্যথা কমায়: নিয়মিত আদা খাওয়া মাসিকের ব্যথা ও অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি পেটের নিচের অংশে ব্যথা ও ক্র্যাম্প কমিয়ে মাসিকের সময়কার অস্বস্তি দূর করে। ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহও কমায়। তাই, ঋতুস্রাবের আগের 3 দিন এবং প্রথম 2 দিন আদা অথবা আদা পানি খাইতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: আদা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত পাতলা করে এবং রক্ত নালীর প্রদাহ কমায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: আদা মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, আলঝেইমার ও পার্কিনসন’স রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং স্নায়বিক কার্যকারিতা উন্নত করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আদা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি শ্বেত রক্ত কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
অন্যান্য উপকারিতা
- চুলের যত্ন: আদা চুল পড়া রোধ করে, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং খুশকি দূর করে। কারণ এটি জীবাণু-বিরোধী, প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত। আর এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই বিভিন্নভাবে চুলের জন্যে উপকারী।
- ত্বকের যত্ন: আদা ত্বকের প্রদাহ কমায়, ব্রণ ও মুখের দাগ দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে। নিয়মিত আদা পানি পান করলে রক্ত বিশুদ্ধ হয়, যার প্রভাব সরাসরি ত্বকে দেখা যায়।
- ব্যথানাশক: আদা মাথাব্যথা, দাঁতের ব্যথা, ও পেট খিঁচুনির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে: আদা পানি প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারের কৌশল
- আদা কাঁচা, শুকনো, বা গুঁড়ো আকারে ব্যবহার করা যায়।
- চা, স্যুপ, ও অন্যান্য খাবারে আদা ব্যবহার করা যায়।
- আদা পানি তৈরি করে খাওয়া যায়।
- আদার তেল ব্যবহার করে ম্যাসাজ করা যায়।
আদা খাওয়ার সময় আমাদের সামনে যে প্রশ্নটা সবথেকে বেশি আসে সেটা হল, আদা শুকনো নাকি কাঁচা কোনটি বেশি উপকারী? বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা আঁধার থেকে শুকনো আদা বেশি উপকারী। আবার, অনেকেই আদা পিষে ফ্রিজে রেখে খান। তবে এভাবে ফ্রিজে রেখে খেলে এর থেকে ঔষধি গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
সতর্কতা
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের অতিরিক্ত আদা খাওয়া উচিত নয়। কারণ, গর্ভাবস্থায় এটি খেলে প্রিম্যাচিউর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গর্ভবতী নারীদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।
- যাদের পেটের আলসার বা রক্তপাতের সমস্যা আছে তাদের আদা খাওয়া একেবারেই উচিত নয় অথবা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাওয়াই উচিত। এছাড়াও, যদি ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন, তাহলে আদা এড়ানোই ভালো।
- যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা এটি বেশি খেলে শরীরে চুলকানি, শরীর ও মুখ ফুলে যেতে পারে।
- আদা বেশি খেলে ডায়রিয়া, পেটব্যথা এসব সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি, একদিনে পাঁচ গ্রামের বেশি আদা খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
উপসংহার
আদা একটি সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন মশলা। এটি নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করা সম্ভব। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আদার অনেক ব্যবহার রয়েছে। আদার মধ্যে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান।
এগুলো হলো ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ক্রোমিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও আদা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই আজ থেকে আপনিও আদা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।