হস্ত মৈথুন ত্যাগ করার খুব সহজ কিছু উপায়
হস্ত মৈথুন ত্যাগ করার সহজ উপায় বা হস্ত মৈথুন থেকে বাচার উপায়
আপনাকে প্রথমেই একটি প্রশ্ন করি। প্রশ্নটি হলো: একজন মানুষ (পুরুষ অথবা মহিলা) কেন এবং কখন হস্তমৈথুন করে?
আপনি যদি যৌক্তিকভাবে এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারেন, তাহলে আপনার কাছে হস্তমৈথুন ত্যাগ করাটা একেবারেই সহজ হয়ে যাবে। কারণ, হস্তমৈথুন ত্যাগ করতে হলে (মানুষ কেন হস্তমৈথুন করে) এই বিষয়টা অবশ্যই আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে।
তাই, আজকের প্রবন্ধে আমরা জানার চেষ্টা করবো
- (#) মানুষ কেন এবং কখন হস্তমৈথুন করে।
- (#) কিভাবে একজন মানুষ খুব সহজে হস্তমৈথুন ত্যাগ করতে পারে বা হস্ত মৈথুন ত্যাগ করার সহজ উপায়।
- (#) হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি।
চলুন তার আগে বর্তমান বিশ্বে হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করি–
বর্তমান সময়ে হস্তমৈথুন যুবক এবং যুবতীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বয়সী নারীদের মধ্যে ৫০ থেকে ৮৯ শতাংশ এবং
পুুরুষদের মধ্যে ৭০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ সরাসরি হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন কারণে মানুষ এই হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। যেমন: মেয়েদের পোশাকের অত্যাধুনিক পরিবর্তন, নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখা, নারী এবং পুরুষের অবাধ মেলামেশা, আমাদের পরিবেশ, সমাজ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে পর্নোগ্রাফি (ব্লু ফিল্ম) সবথেকে বেশি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অল্পমাত্রায় বা নির্দিষ্ট পরিমাণ হস্তমৈথুন শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু মাত্রা অতিরিক্ত হস্তমৈথুন শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন মহাপাপ। এটার শাস্তিও অনেক ভয়ঙ্কর। কারণ, হস্তমৈথুন ইসলামে পুরোপুরি নিসিদ্ধ।
এখন চলুন একেবারে প্রথম প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
মানুষ কেন এবং কখন হস্তমৈথুন করে
আপনার কাছে আরও একটি প্রশ্ন করি। একজন মানুষের প্রধান সেক্স অর্গান কি? আপনি কি ভাবছেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এক জন মানুষের প্রধান Sex Organ হল তার মস্তিষ্ক । কারণ মস্তিষ্কে এমন কিছু Neurotransmitter রয়েছে যেটা মানুষের সেক্সুয়াল এনার্জি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
যখন কোন ব্যক্তি যৌন উত্তেজক কিছু দেখে বা কল্পনা করে, তখন তার শরীরে Testosterone হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। আর এই Testosterone হরমোনের কাজ হলো ব্যক্তির যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করা।
একই সাথে, Endorphins, Dopamine , এর মত আরো কিছু শক্তিশালী Neurochemicals ব্রেনে নিঃসরিত হয়। বলে রাখা ভালো, এখানে Dopamine কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ Dopamine এর কারণেই আমরা যৌনসুখ উপলব্ধি করতে পারি।
Dopamine এর আরো একটি অন্যতম কাজ হল, ব্যক্তিকে অন্যান্য বিষয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে, যৌন সঙ্গী বা অঙ্গিনীর উপর মনোযোগ বৃদ্ধি করা। এইজন্য, ঐ সময় ব্যক্তির নিজের কাছে হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলোর গুরুত্ব কমে যায়।
পাশাপাশি, এই কেমিক্যাল গুলো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ উত্তেজনায় পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং Orgasm করতে বাধ্য করে। আর ফাইনিলী ঐ ব্যক্তি হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়।
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, একজন ব্যক্তি কখন এবং কেন হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়। হস্তমৈথুন বা যেকোনো সেক্সের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনার ব্রেন।
এই জন্য হস্তমৈথুন ত্যাগ করতে হলে সর্বপ্রথম অপনার ব্রেনকে কনভার্ট করা শিখতে হবে, এবং Dopamine অ্যাডিকশন ছাড়তে হবে। পাশাপাশি কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
হস্ত মৈথুন ত্যাগ করার সহজ কিছু উপায় বা কৌশল
হস্তমৈথুন ত্যাগ করতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটা হল, আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে, প্রচুর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এরপর নিজের সাথে নিজে একটি চ্যালেঞ্জ করুন, এবং চিন্তা করুন এই চ্যালেঞ্জে আমি কখনোই হেরে যাবো না।
এটা আপনাকে হস্তমৈথুন ত্যাগ করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে, এক দিনেই আপনি যেকোন নেশা থেকে মুক্তি পাবেন না। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কোন ভাবেই হতাশ হয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
এরপর আপনি খুঁজে বের করুন, আপনার দিনে বা রাতে কোন সময়টাতে বেশি হস্তমৈথুন করার ইচ্ছা জাগে, বা আপনি কোন সময় হস্তমৈথুন করেন। এই সময়টাতে আপনার রুটিনের সবথেকে ইম্পর্টেন্ট কাজটা রাখুন।
এমন একটি কাজ, যে কাজটা আপনাকে করতেই হবে। এটা হস্ত মৈথুন থেকে বাচার একটি ভালো উপায়। এরপর, আপনার ব্রেনকে কনভার্ট করার চেষ্টা করুন। (এই পয়েন্টটা আপনার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট)।
যখন আপনার যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, বা যৌন উত্তেজক কিছু দেখছেন বা কল্পনা করছেন, ঠিক এই সময়, অর্গাজম হওয়ার আগেই আপনার ব্রেইনকে কনভার্ট করে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন: ওই সময় অফিস বা ব্যবসার কোন কাজ থাকলে সেটা নিয়ে ভাবতে পারেন, আপনার জীবনের কোন সমস্যা থাকলে সেটার সমাধান খুঁজতে পারেন, নিজেকে বুঝতে পারেন আপনি যেটা করছেন এটা ঠিক না, এতে আপনার শারীরিক এবং মানসিক উভাই ক্ষতি হচ্ছে।
এককথায়, যে কোন ভাবে আপনার মনোযোগটা অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করুন। আর আপনি যদি এটা করতে পারেন, তাহলে ধরে নিন আপনি এই চ্যালেঞ্জের 80 পার্সেন্ট সফলতা অর্জন করে ফেলেছেন।
এরপর, যেসব জিনিসগুলো আপনাকে হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করে সেগুলো বর্জন করুন। যেমন: আপনার ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামের ওয়ালেটে যদি কোন সেক্সুয়াল নিউজ আসে সেগুলো ব্লক করে দিন। আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে পর্নোগ্রাফি বা চটি কালেকশন থাকলে এখনই তা ডিলেট করে দিন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনার ব্রাউজারটা অবশ্যই পরিষ্কার করে নিন। এক কথায়, যেকোনো ধরনের সেক্সুয়াল নিউজ বা পর্ণোগ্রাফিকে একেবারেই না বলুন। হস্ত মৈথুন ত্যাগ করার উপায় খুঁজতে গেলে এগুলো আপনাকে অবশ্যই করতেই হবে।
কারণ, সাধারন মানুষের অনেক বড় একটি অংশ হস্তমৈথুনে আসক্তি হয়ে পড়ছেন, শুধুমাত্র পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে। এখানে আরো অন্যান্য কারণও রয়েছে, কিন্তু মেজর প্রবলেম হিসাবে পর্ণোগ্রাফিকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে শিশুদের নিয়ে কাজ করে, এরকম একটি দাতব্য সংস্থা প্ল্যান ইউকে এবং ইন্সটিটিউট অফ সাইকোসেক্সুয়াল মেডিসিন বলেছেন, পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে পরবর্তীতে কী ধরনের বিপদ হতে পারে সে বিষয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পড়ানো উচিত। পাশাপাশি, শিশুদের ওপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই সংস্থাটি।
আবার, 2019 সালে ব্রিটেনে 18 থেকে 25 বছর বয়সী টোটাল জনসংখ্যা উপরে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। এই জরিপে 77 শতাংশ পুরুষ এবং 47 শতাংশ নারী বলেছেন যে, এই জরিপের আগের মাসে তারা পর্নোগ্রাফি দেখেছেন।
সুতরাং আপনার পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস থাকলে আজ থেকেই সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করুন।
আপনার যদি একা থাকার অভ্যাস থাকে তাহলে অবশ্যই এটা ত্যাগ করুন। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে এক্সারসাইজ করার অভ্যাস করুন।ঘরে বেশি সময় না কাটিয়ে কোন পাবলিক প্লেসে জান অথবা বন্ধুদের সাথে সময় দিন।
আপনার যেটা করতে সবথেকে বেশি ভালো লাগে যেমন: মুভি দেখা, বই পড়া, ভিডিও গেম খেলা, ইত্যাদি এগুলোতেও সময় দিতে পারেন। প্রয়োজন হলে, খুব কাছের বন্ধুদেরও সহযোগিতা নিতে পারেন।
খুব বেশি আসক্তি হয়ে পড়লে মেডিটেশন করুন, যোগ ব্যায়াম করুন এমনকি সেক্সচুয়াল থেরাপিও নিতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে বিয়ে করে ফেলুন। কারণ বিয়ে হল হস্তমৈথুন ত্যাগ করার সবথেকে সহজ উপায়। সর্বোপরি ইসলামের অনুশাসন মেনে চলুন। কারণ ইসলামে হস্তমৈথুন পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
হস্তমৈথুনের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সমূহ
বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুন এমন একটি বিষয়, যা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। কিন্তু কেউ যদি মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন করেন, তবে তা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। যেমন:
- শরীরে রক্ত উৎপাদন কমে যাবে।
- চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
- হাটুতে ভর করে দাঁড়াতে কষ্ট হবে।
- কিডনি দূর্বল হয়ে যাবে, ফলে প্রস্রাবে সমস্যা হবে।
- হাটু, হাত,পায়ের গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা করবে।
- মাথা কমিড়ে ব্যথা করবে।
- মোট কথা শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ দূর্বল হয়ে যাবে।
শুধু তাই নয়, হস্তমৈথুনের এই অভ্যাসটি অনেকের যৌন জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। মাত্রা অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে টেসটোস্টেরনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে হজম ক্ষমতা কমে যায়, পেশি দুর্বল হয়ে যায়।
শরীরে সবসময় ঝিমঝিম ভাব থাকে। এছাড়াও, হস্তমৈথুনের আরো অন্যান্য অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। হস্ত মৈথুন ত্যাগ করার আরো একটি ভালো উপায় হল আপনাকে বার বার হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পড়তে হবে বা মনে করতে হবে।
সামারি
হস্তমৈথুন কেউ যদি একবার শুরু করে, তাহলে তার পক্ষে এটা ত্যাগ করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে চেষ্টা করলে কোন কাজই অসম্ভব নয়।
এটাও মনে রাখতে হবে, আপনি একদিনেই যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসতে পারবেন না। কিন্তু একাগ্রতা এবং চেষ্টা থাকলে ধীরে ধীরে যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসা সম্ভব। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে। তখন হতাশ হয়ে সব ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার সামনে আগাতে হবে।
NOTE:- আপনাকে এই কথাটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। হস্ত মৈথুন থেকে বাচার বা ত্যাগ করার সবথেকে ভালো উপায় হল, আপনাকে সম্পূর্ণ মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তাহলে আপনি অবশ্যই সফলতা অর্জন করতে পারবেন। ধন্যবাদ