মধুর খুব গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
(মধুর বা মধু খাওয়ার উপকারিতা)
মধু সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, “মধু হচ্ছে এমন একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যেটা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে। একই সাথে সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে, এটাতে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, ক্রোমিয়াম, লেডটিন, বোরন, জৈব এসিড, এসিটাইল, প্রোটিন, হরমোনস, কপার, ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক, কতিপয় ভিটামিন, কলিন, অ্যান্টিবায়োটিকস, ফাইটোনসাইডস, ইসস্টো, স্টাটিক্স ইত্যাদি। এছাড়াও মধুতে প্রায় 45 টি খাদ্য উপাদান রয়েছে।
সুতরাং এটা খুব সহজেই বলা যায় যে, শারীরিক সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অনেক। তাই চলুন একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-
মধুর ইতিহাস
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে চিকিৎসা এবং সৌন্দর্যচর্চা সহ নানা ভাবে মধু ব্যবহার করে আসছে। গ্রিকদের খাদ্য সংস্কৃতিতে বিশাল একটা অংশজুড়ে ছিল মধু। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, সব পানীয় উপাদানের মধ্যে মধু সর্বোৎকৃষ্ট। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটস বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে মধু ব্যবহার করতেন। তিনি মধুকে অতিরিক্ত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করারও পরামর্শ দিতেন। এছাড়া, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও এই মধুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ধারণা করা হয়, খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ৭০০০ বছর আগে থেকে মানুষ মধু ব্যবহারের সাথে পরিচিত হয়েছে। বর্তমানে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মধু উৎপন্ন হয় চীনে (প্রায় ২৫ শতাংশ) এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে জার্মানি (জনপ্রতি ১.৮ কেজি)। ভারতে মাথাপিছু প্রায় ৯ গ্রাম এবং বাংলাদেশে ২ গ্রাম। মজার ব্যাপার হলো, মানুষ ইচ্ছা করলেও মধু উৎপন্ন করতে পারবে না। এটি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া অনেক বড় একটি নেয়ামত।
মধুর বা মধু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
1.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম রয়েছে যেগুলো শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, মধুতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যেটা দ্রুত ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, এটা শরীরের ভেতরে ও বাইরে যে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এটা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে সাহায্য করে এবং যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খাইতে পারেন।
2.ওজন কমাতে সাহায্য করে
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাত্র তিন সপ্তাহেই আপনি আপনার বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন, শুধুমাত্র মধু খেয়েই। গবেষকরা এই মধু খাওয়ার বিষয়টিকে হানি ডায়েট হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। হানি ডায়েটের প্রবক্তা মাইক বলেছেন, যারা অ্যাথলেট ফ্রুকটোজ সমৃদ্ধ খাবার মধু খান, তাঁরা প্রচুর মেদ ঝরাতে সক্ষম হন। কারণ, মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়, আর এই কারণে মস্তিষ্কে সুগার লেভেল বেড়ে যায়, যেটা মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে।
3.যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
মধু শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি যৌন অক্ষমতাকে সক্ষম করে তুলতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটেনের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, নারী-পুরুষ উভায়েরই যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করতে চাকভাঙ্গা মধু বিশেষভাবে কার্যকরী। পাশাপাশি ব্রিটিশ গবেষকদের দাবি, পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধিতে মধু খুবই কার্যকরী।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মধুর একাধিক ঔষধিগুণ এবং নাইট্রিক এসিড মানব দেহের টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি যৌনাঙ্গেও রক্তপ্রবাহ বেড়ে, ফলে শরীরে যেমন শক্তি উৎপন্ন হয়, তেমনই যৌন উত্তেজনাও বৃদ্ধি পায়। একই সাথে মানবদেহে স্নায়ুর উদ্দীপনা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4.শারীরিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
মধুতে প্রায় 45 টিও বেশি খাদ্য উপাদান রয়েছে। সাধারণত 100 গ্রাম মধুতে, 25 থেকে 37 শতাংশ গ্লুকোজ, 34 থেকে 43 শতাংশ ফ্রুক্টোজ, 5 থেকে 12 শতাংশ মন্টোজ, 0.5 থেকে 3.0 শতাংশ সুক্রোজ রয়েছে। সুধু তাই নয়, আরো রয়েছে 28 শতাংশ খনিজ লবণ, 22 শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, 11 শতাংশ এনকাইম এবং 288 গ্রাম ক্যালরি। এই সবগুলো উপাদানই শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী। পাশাপাশি এটাতে কোন চর্বি ও প্রোটিন নেই।
আবার, মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
5.রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে
মধুতে রক্ত উৎপাদনকারী বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে, যেমন: আয়রন, কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে এগুলো শরীরের রক্ত উৎপাদন করতে সাহায্য। পাশাপাশি, হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া, মধুর সাথে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেলে রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। পাশাপাশি, রক্তনালী পরিষ্কার হয় এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ 10 শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
6.সর্দি কাশি সারাতে মধুর উপকারিতা
মধু গরম একটি খাবার তাই ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করতে এটা খুবই কার্যকরী। এক চা চামচ আদার রস এবং এক চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধেবেলা খেলে সর্দির উপশম হয় ও খুদা বৃদ্ধিপায়। আবার, এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি দূর হয়। আবার, সৈন্ধব লবণ, আমলকী, পিপুল, মরিচ ইত্যাদির সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে কফ ও স্বরভাঙ্গা ভালো হয়।
এছাড়াও, 2 চা চামচ মধু 1 গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় খেলে সর্দিকাশি দূর হয়। খাঁটি মধুর সঙ্গে হরীতকী ও বচচূর্ণ মিশিয়ে চেটে খেলে শ্বাসকষ্টের খুবই উপকার পাওয়া যায়। তাই রোজ সকালে মধু খান ঠান্ডা লাগা, কফ, সর্দি, কাশি ইত্যাদির সমস্যা থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।
7.ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
মধু ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই কার্যকরী। মধুতে রয়েছে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল’ ও প্রদাহনাশক গুণাবলী, যেগুলো ফুসফুস পরিষ্কার করতে এবং ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া মধুতে বেশ কিছু ভিটামিন, উত্সেচক এবং প্রোটিন রয়েছে যেটা শরীর থেকে নিকোটিন বের করে দেওয়ার পাশাপাশি সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকেও কমিয়ে দেয়।
আর আমরা সবাই এটা জানি সিগারেট ফুসফুসের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই জন্যই প্রাচীনকাল থেকে হাঁপানি, যক্ষ্মা এবং গলার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও, মধুর সঙ্গে আদা এবং গোলমরিচ মিশিয়ে খাইতে পারেন। এই মিশ্রনটি খাইলে যেমন শ্বাসকষ্ট দূর হয়, তেমনই ফুসফুসে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন পৌছাতে সাহায্য করে। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
8.ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
প্রাচীন কাল থেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাতে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং এর চেয়েও বেশী কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। আজকাল ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারাতেও মধুর ব্যবহারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।
এছাড়াও, অনেক সময় ভিটামিনের অভাবে মুখের ভেতরে এক ধরনের ঘা হয়, অথবা দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে মধু পানি কুলি করলে উপকার মেলে। পাশাপাশি, গলার স্বর যন্ত্রে বা স্বরনালীতে সংক্রমণ হলেও সেই ক্ষত দূর করতে নিয়ম মাফিক মধু সেবন করতে পারেন। এটা ক্ষত নিরাময় করে এবং ভাইরাসের সংক্রমণ দূর করে।
9.স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
যাদের মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু এনে দিতে পারে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা। ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু মস্তিষ্কের কাজ সঠিক ভাবে করতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু জেগে থাকে। সুতরাং তখনও তার শক্তি দরকার। আর এই শক্তির অনেকটাই যোগান দেয় মৌমাছির চাক ভেঙ্গা মধু।
মধুতে উপস্থিত ফলজ, শর্করা এবং ফ্রুকটোজ মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেই কাজ করে।এছাড়াও, মধু ও দারুচিনি স্নায়ুকে শিথিল করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল দারুচিনি একটু নাকের কাছে নিয়ে শুঁকলেও স্মৃতিশক্তি ভালো হয়, এতে মস্তিষ্কের কার্যক্রম বাড়ে।অনেকে এটাও বলেন, ঘুমের আগে মধু খেলে মানসিক চাপ কমে, এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতি একত্রীকরণেও ভূমিকা রাখে।
10.চুল এবং ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা
আমাদের মনে রাখা উচিত, ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে মধু। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। তাই নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও সুন্দর। এছাড়া ব্রণ, বলিরেখা ও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে এই প্রাকৃতিক উপাদান। তাই ত্বক ভালো রাখতে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও, মধুতে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির প্রায় সবগুলোই পাওয়া যায়। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক হুমেকটেন্ট, এটি বাতাস থেকে আর্দ্রতা নিয়ে আপনার চুলে এবং ত্বকে তা ধরে রাখে। পাশাপাশি, মধুর হুমেকটেন্ট উপাদান চুল ভেঙে যাওয়া রোধে সাহায্য করে এবং রুক্ষতা দূর করে চুল সুস্থ ও মজবুত করে তোলে।
পাশাপাশি, মধুতে গস্নুকোজ অক্সিডেস এনজাইম নামক একটি উপাদান রয়েছে। তাই একটু বেশি সময় ধরে চুলে মধু দিয়ে রাখলে এই এনজাইম ধীরে ধীরে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নিঃসরণ করে। যেটা চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আবার, মধুতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্টে থাকে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চুলের ক্ষতি রোধ করে এবং মাথার স্ক্যাপ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
11.মধুর অন্যান্য উপকারিতা
মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। উপরোক্ত উপকারিতা ছাড়াও মধুর আরো অন্যান্য অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন:
- হাঁপানি সমস্যা সমাধানে মধু খুবই কার্যকরী।বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১ চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য দারচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি অনেক কমে যায়।
- গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
- মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ছোটো বড়ো অনেকেই শরীরের বা জয়েন্টের ব্যথায় কষ্ট পায়। এই সমস্যার মূল কারণ হল শরীরের অবাঞ্ছিত রস। এই রসের কারণে বাতের ব্যথা তৈরি হয়। আর শরীরের এই খারাপ রস অপসারণ করতে মধু খুবই কার্যকরী।
- প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ মতে, হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবচেযে উপকারী হলো মধু। মধুতে ওলিগোস্যাচারিডস নামের একটি কার্বোহাইড্রেটস উপাদান রয়েছে, যা রক্তের শিরাগুলোর ওপর শীতল প্রভাব ফেলে। ফলে, উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও রক্তনালী শান্ত থাকে।
খাঁটি মধু চেনার উপায়
খাঁটি মধু বা ভেজাল মধু চেনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হচ্ছে ল্যাব টেস্ট। এর বাইরে আরেকটি উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। তা-হলো মধু নিয়ে গবেষণা করেন এবং মধু বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন ও সত্য কথা বলেন , এমন কোনো ব্যক্তি যদি বলেন মধু খাঁটি, তাহলে তার কথায় আস্থা রাখা যাবে। এর বাইরে সাধারণ মধু ক্রেতাদের আর কোনো উপায় নাই খাঁটি বা ভেজাল মধু চেনার।
অনেকের ধারণা খাঁটি মধু কখনোই জমাট বাধে না। কিন্তু তা সঠিক নয়। মধুর প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে আছে সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ সুযোগ পেলে জমাট বাধবেই। একে বলে ক্রিসটালাইজেশন। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ফুলের মধু জমাট বাধতে দেরীও হতে পারে।
আবার, মধুর ঘনত্ব-ভিত্তিক টেস্টের বিষয়টি ভিত্তিহীন। কারণ, মধু পাতলাও হতে পারে। যেমন: বরই ফুলের মধুতে ময়েশ্চারের পরিমাণ বেশি থাকে, এজন্য এটা পাতলা হয় এবং প্রচুর গ্যাস হয়।
মধুতে আগুন ধরলে মধুটি আসল, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ মধুর সাথে মোম মিশিয়ে যদি তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় তাহলে মধুতে খুব সহজেই আগুন জ্বলবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মোমটা যদি মধুতে না মিশিয়ে চিনির শিরাতে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও একই ফল পাবেন।
তাই খাঁটি মধু কিনতে হলে ল্যাব টেস্ট করিয়ে কিনতে হবে অথবা নিজ পরিচিত কোন দোকান থেকে কিনতে হবে।
সামারি
পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা খাবারের একটি তালিকা করি, সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে ‘মধু’র নাম। এটি শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। এককথায়, মধু হলো মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার এক অশেষ নিয়ামত।