Health Tips

পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায়: সম্পূর্ণ গাইডলাইন

(পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায়)

আমরা সবাই চাই একটি সুন্দর এবং মেদহীন দেহের মালিক হতে। কিন্তু যখন মনের অজান্তেই শরীরে ফ্যাট জমতে থাকে তখন চিন্তার শেষ থাকে না। আবার অনেকে আছে খুব বেশি মোটা না কিন্তু পেটে অনেক মেদ ,কিংবা শরীরের অন্যান্য জায়গায় মেদ জমার কারণে খুব অসস্তি বোধ করেন। এই ব্যাপারটা লক্ষণীয় যে যখনই মেদ বাড়ে তখনই মনে হয় যেন সব মেদ পেটেই জমছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি আরো বেশি জটিল হয়ে ওঠে।

এছাড়াও, অতিরিক্ত মেদ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং উচ্চ রক্তচাপ। সুতরাং, সুস্থ ও টেকসই পদ্ধতিতে মেদ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে হলে আগে আমাদেরকে জানতে হবে, শরীরে মেদ জমে কেন? চলুন প্রথমেই এই প্রশ্নটার একটু উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি-

পেটের মেদ কমানোর উপায়

শরীরে কেন মেদ জমে?

শরীরে মেদ বা চর্বি জমার ক্ষেত্রে খাদ্যের গুরুত্ব সব থেকে বেশি। আমরা দৈনন্দিন কাজের জন্য যে শক্তি পায় সেটা আসে খাদ্য থেকে। আর এই শক্তিটাই আমরা ক্যালোরি নামে চিনে থাকি। আর দৈহিক ওজন বৃদ্ধির মূল কারণই হলো এই ক্যালোরি। যদি কোন ব্যক্তি তার প্রতিদিনের চাহিদার থেকে বেশি পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করে, তাহলে এই বাড়তি ক্যালোরিটুকু সোজা তার শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হবে।‌

তাহলে এক কথাই বলতে পারি, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন তার থেকে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলে সেটা ফ্যাট হিসেবে জমা হবে বা শরীরের মেদ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বিভিন্ন জিনগত কারণেও পেটে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় মেদ জমে।

আর, একজন মানুষের বয়স, লিঙ্গ, ওজন এবং তার দৈনন্দিন কাজের উপর শরীরিক এই ক্যালরির চাহিদা নির্ভর করে। যেমন: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার প্রতিদিন ১৬০০-২৪০০ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত। আবার একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ১৮০০-৩০০০ ক্যালরি প্রয়োজন।

একইভাবে, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী বাচ্চাদের ৩২০০ ক্যালোরি, ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সি যুবক-যুবতীদের ২০০০ থেকে ২২০০ ক্যালোরি, একটি বাচ্চার প্রয়োজন ১০০০ ক্যালোরি। এইভাবে একজন মানুষের লিঙ্গ, শারীরিক গঠন, উচ্চতা ইত্যাদির উপর তার শারীরিক এই ক্যালরির চাহিদা নির্ভর করে।

এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন আছে। সেটা হল: একজন মানুষের একদিনে যে পরিমাণ ক্যালরি প্রয়োজন সেটা খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি?

আপনি যদি আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বদ্ধপরিকর বা খুবই আগ্রহী হন তাহলে এই পয়েন্টটা আপনার জন্য খুবই ইম্পর্টেন্ট। তাই আস্তে আস্তে বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন-

মেদ কমানোর উপায়

ক্যালোরি গ্রহণের সঠিক নিয়ম

আমরা আগেই জেনেছি একজন মানুষের প্রতিদিনের যে ক্যালরির চাহিদাটা থাকে সেটা নির্ভর করে তার, লিঙ্গ,উচ্চতা,কাজের ধরন,শারীরিক গঠন ইত্যাদির উপর। ধরুন আপনার শারীরিক গঠন অনুযায়ী আপনার প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা 1800। তাহলে আপনি কি 1800 ক্যালোরি একবারেই খাবেন? উত্তরটা হল: না।

কারণ আমাদের শরীর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি হলে শরীর সরাসরি ফ্যাট হিসেবে জমা করে দেয়। এই নির্দিষ্ট সময় বলতে আড়াই থেকে তিন (2.30-3.00) ঘন্টার মত সময়কে বোঝানো হয়। কারণ একবার খাইলে সেটা হজম হতে আড়াই থেকে তিন (2.30-3.00) ঘন্টার মত সময় লেগে যায়।তাহলে এই হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক ঘন্টায় আমাদের শরীর 1800÷24=75 ক্যালোরি পোড়াই।

যেহেতু একবার খাইলে সেটা হজম হতে 3 ঘন্টার মত সময় লেগে যায়। তাই 3 ঘন্টা পর পর (75×3=225) ক্যালোরি,আর ঘুমের সময়টা ধরে মোট 300 ক্যালোরি দরকার।

এখন আপনি যদি দিনে তিনবার খান, তাহলে 5-6 ঘন্টা পর পর 600 ক্যালোরি করে খাইতে হবে। তাহলে 3 ঘন্টায় আপনার শরীর 300 ক্যালোরি বার্ন করবে এবং বাকি ক্যালোরি সোজা ফ্যাট হিসেবে জমা হবে। বাকি 3 ঘন্টা শরীর নতুন খাদ্যের জন্য অপেক্ষা করবে। যখন শরীর দেখবে নতুন খাবার আসছে না, তখন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করবে এবং সেটা ফ্যাট হিসাবে।

যদি আমরা খাবার হজম হওয়া মাত্রই শরীরকে নতুন খাবার দিয়ে থাকি (3 ঘন্টা পর পর)। তখন শরীর কষ্ট করে আর অভ্যান্তরীণ শক্তি সঞ্চয় করবে না। অর্থাৎ শরীরে কোন ফ্যাট জমা হবে না। তখন শরীর সম্পূর্ণ দৃষ্টি দেবে বাহ্যিক কাজের উপর।

আপনি যদি এই নিয়মমাফিক চলতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে নতুন করে আর, নতুন কোন চর্বি বা ফ্যাট জমা হবে না। এবার, আপনার শরীরে অলরেডি যে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট গুলো আছে সেগুলো ঝরানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে শরীরের বা পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর দুইটি কার্যকরী উপায় আছে-

  • প্রথমত: খাবারের মাধ্যমে।
  • দ্বিতীয়ত: ব্যায়ামের মাধ্যমে।

চলুন তাহলে এগুলো স্টেপ বাই স্টেপ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-

পেট কমানোর উপায়

খাদ্যাভ্যাস

ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ:

  • আপনার BMR (Basal Metabolic Rate) ও PAL (Physical Activity Level) অনুযায়ী ক্যালোরির পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
  • ক্যালোরি ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করুন।
  • খাবারের ক্যালোরি সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
  • মনে রাখবেন, শরীরের বা পেটের মেদ কমানোর অন্যতম একটি উপায় হলো ক্যালরির নিয়ন্ত্রণ করা।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:

  • ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের উপর জোর দিন।
  • পূর্ণ শস্য, ডাল, এবং স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।

খাদ্যাভ্যাসের নিয়মিতা

  • নিয়মিত সময় মতো খাবার গ্রহণ করুন।
  • অতিরিক্ত খাওয়া এবং রাতের খাবার বাদ দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

শারীরিক কার্যকলাপ

ব্যায়াম

  • প্রতিদিন কমপক্ষে 30 মিনিট মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
  • হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বা জিমে যাওয়ার মতো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • ব্যায়ামের ধরণ ও তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করুন।

শারীরিক শ্রম

  • দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক শ্রমের পরিমাণ বাড়ান।
  • লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
  • হেটে বা সাইকেল চালিয়ে কাজে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • যখন ঘরে বা অফিসে বসে কাজ করবেন তখন নিয়মিত বিরতি নিন এবং হালকা শারীরিক কার্যকলাপ করুন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

  • যোগব্যায়াম, ধ্যান, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান।
  • পর্যাপ্ত ঘুম (7-8 ঘন্টা) নিশ্চিত করুন।
  • প্রয়োজনে একজন মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিন।

ধৈর্য্য ধরা

  • আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মেদ কমানোর জন্য বেশ সময় লাগে।
  • দ্রুত ফলাফলের প্রত্যাশা না করায় ভালো।
  • নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং হতাশ হওয়া যাবে না।

সহায়তা গ্রহণ

  • পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা গ্রহণ করুন।
  • প্রয়োজনে একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

উপসংহার

ওজন কমানো নির্ভর করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার রুটিনের ওপর।

ডা. বোল বলেন, “তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান ওজন কমানোর পাশাপাশি ব্যক্তির মানসিক অবস্থার দিকেও মনযোগ দেয়। যদি সকল প্রচেষ্টার পরও আশানুরুপ ফলাফল না পাওয়া যায়, তবে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।”

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওষুধের মাধ্যমে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button