Others

উচ্চ রক্তচাপ কি? কিভাবে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় করবেন বিস্তারিত জানুন

বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। অধিকাংশ সময় এই রোগের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। এটি নীরবেই শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। এই জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়ে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।

  • (#)এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতেই পারে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে বিশ্বে এতো মানুষ কেন মারা যায়?

উত্তরটা খুবই সহজ। সবথেকে বড় কারণ হল সচেতনতার অভাব। একটু সচেতন থাকলেই উচ্চ রক্তচাপের 50 পার্সেন্ট প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে উচ্চ রক্তচাপ একটি স্থায়ী রোগ। এই জন্য এই রোগ প্রতিরোধ করতে চিকিৎসা এবং সচেতনতা দুটোই জরুরী। তা-না হলে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা সহ হঠাৎ করে মৃত্যুও হতে পারে।

পাশাপাশি, উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখ, কিডনি, মস্তিষ্ক বা হার্টের সমস্যাও হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে চিকিৎসার সাথে সচেতনতা খুবই জরুরী।

  • (#) এখানে আরো একটি প্রশ্ন আসে, সচেতন হতে হলে আমাদের কি কি বিষয় জানতে হবে?

হ্যা, উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সচেতন হতে হলে, আপনাকে আগে আরো দুটো বিষয় সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হবে। প্রথমত: রক্তচাপ কি? দ্বিতীয়ত: স্বাভাবিক রক্তচাপ কি? তাহলেই আপনি উচ্চ রক্তচাপ কি এটা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং সচেতনতা অবলম্বন করতে পারবেন।

চলুন তাহলে step-by-step জানার চেষ্টা করি। সর্বপ্রথম জানতে হবে রক্তচাপ কি?

রক্তচাপ কি

রক্তচাপ কি

হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করার সময় শিরা ও ধমনীর ওপরে যে পরিমাণ চাপ দিয়ে থাকে তাই হচ্ছে রক্তচাপ। আরো ভালো ভাবে বলা যায়, হৃদপিন্ডের কাজ হলো সারা শরীরে রক্ত পৌঁছে দেওয়া, একই সাথে অক্সিজেন এবং শক্তিরও যোগান দেয় এই হৃদপিণ্ড।

আর এই রক্ত চলাচলের সময় ধমনির গায়ে যে চাপ তৈরি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে। একেবারে সহজ ভাবে বলা যায়, রক্তচাপ হল রক্তনালীর গাত্রের উপর রক্ত কর্তৃক প্রযুক্ত চাপ। যা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোগনির্ণায়ক লক্ষণ।

এই রক্তচাপের পরিমাপকে দুইভাবে নির্ণয় করা হয়। প্রথমটা হলো সিস্টোলিক এবং দ্বিতীয়টা হলো ডায়াস্টলিক। সিস্টোলিক চাপ ওপরে এবং ডায়াস্টোলিক চাপ নিচে লিখে রক্তচাপ প্রকাশ করা হয়।

সিস্টোলিক চাপ কি: হৃৎপিণ্ডের সংকোচণের সময় মানুষের ধমনি ও শিরায় যে রক্তের চাপ সৃষ্টি হয় তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের সময় ধমনির গায়ে রক্তচাপের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। এইজন্য ডায়াস্টলিক চাপের থেকে সিস্টোলিক চাপ সব সময় বেশি থাকে।

ডায়াস্টলিক চাপ কি: হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। সিস্টোলিক চাপের থেকে ডায়াস্টোলিক চাপ সব সময় কম থাকে।

এবার বুঝতে হবে স্বাভাবিক রক্তচাপ কি?

স্বাভাবিক রক্তচাপ

স্বাভাবিক রক্তচাপ

আমরা আগেই জেনেছি, হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করার সময় শিরা ও ধমনীর ওপরে যে পরিমাণ চাপ দিয়ে থাকে তাই হচ্ছে রক্তচাপ। এই রক্ত চাপ বিভিন্ন রকম হতে পারে। এর মধ্যে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মি.মি. পারদ চাপ। যেখানে ১২০ কে সিস্টোলিক (হৃদ-সংকোচন) এবং ৮০ কে ডায়াস্টোলিক (হৃদ-প্রসারণ) চাপ বলা হয়।

রক্তচাপের কোনো একক নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একেকজন মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রাও ভিন্ন হয়। শুধু তাই নয়, একই মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক এই রক্তচাপও বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন: উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়। আবার, ঘুমের সময় এবং বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তচাপের এই পরিবর্তন স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে।

নোট: আমাদের অবশ্যই এটা মনে রাখতে হবে একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো 120/80 মি.মি. পারদ চাপ। মানে, আপনার রক্তচাপ যদি 120/80 হয় তাহলে আপনার প্রেসার ঠিক আছে। এটা বয়সভেদে কিছুটা পরিবর্তন হয়।

এখন চলুন উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি: বিভিন্ন কারণে হৃৎপিণ্ডের রক্ত নালী যখন সরু হয়ে যায় বা শক্ত হয়ে যায় বা হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে যায়, তখন রক্ত চলাচল করতে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় শক্তির বা চাপের প্রয়োজন হয়, আর শারীরিক এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। একেবারে সহজে বলা যায়, রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।

আমরা আগেই জেনেছি, স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো 120/80 মি.মি. পারদ চাপ। অর্থাৎ রক্তচাপ 140/90 মি.মি. পারদ চাপের বেশি হলে তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। আবার 140 / 90 এবং 120 / 80 মিলিমিটার পারদ চাপের মাঝামাঝি রক্তচাপকে প্রাক্-উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির সর্বশেষ নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাক্–উচ্চ রক্তচাপ আবার দুটি ভাগে বিভক্ত। যেমন:

রক্তচাপ 130 / 85 মিলিমিটার পারদের নিচে হলে তাকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়। আবার 130 / 85 মিলিমিটারের ওপরে কিন্তু 140 / 90 মিলিমিটার পারদের নিচে মাত্রা হলে তাকে উচ্চমাত্রার স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়। এক কথায়, আপনার রক্তচাপ যদি 140/90 বা এর ওপরে থাকে তাহলে কোন উপসর্গ না থাকলেও ধরে নিতে হবে আপনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

পাশাপাশি, আপনার রক্তচাপ যদি 180/110 বা এর ওপরে থাকে তাহলে আপনি উচ্চ রক্তচাপের বিপজ্জনক পর্যায় আছেন। এই সময় অস্থির না হয়ে কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিন তারপর আবার রক্তচাপ মাপুন। তারপরও যদি আপনার রক্তচাপ না কমে অথবা বেড়ে যায় থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কারণ আপনি উচ্চ রক্তচাপের বিপদজনক পর্যায় আছেন। এই সময় আপনার হৃৎপিণ্ডে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। যার ফলে, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেলিয়োর, এবং কিডনি ফেলিয়োরের মতো প্রভৃতি সংকটজনক শারীরিক সমস্যার আশংকা বাড়ে যায়।

আপনাকে মনে রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপের বাইরে থেকে বোঝার মত সেরকম কোনো লক্ষণ নেই। কেবলমাত্র নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষার মাধ্যমেই এটি বোঝা যায় বা সঠিকভাবে ধরা পড়ে। তবে সাধারন কিছু লক্ষণ রয়েছে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে। যেমন: রাতে ভালো ঘুম না হওয়া। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। অল্পতেই রেগে যাওয়া। মাথা গরম হয়ে যাওয়া। মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া। অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা। মাথা ঘোরানো বা ঘাড় ব্যথা করা। বুক ব্যথা করা। প্রস্রাবে সাথে রক্ত যাওয়া। দৃষ্টিতে সমস্যা হওয়া। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। নাক দিয়ে রক্ত পড়া। অনেক সময় রোগী জ্ঞান হারিয়েও ফেলতে পারে। উপরের এইসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে হবে। এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ধন্যবাদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button