Healthy and nutritious food

পুদিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুদিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুদিনা পাতা চেনেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। কারণ, পুদিনা পাতার সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা এমন অনেক ধরনের উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছেন যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পুদিনা পাতা অন্যতম একটি।

পুদিনা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম: ‘Mentha spicata’। এটি Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত, এক ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত আগাছা ধরনের এই গাছটির পাতা ডিম্বাকার, পাতার কিনারা খাঁজকাটা, নরম ও সুগন্ধীযুক্ত। গুণে ভরা এই পাতা আমাদের শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

কারণ, পুদিনা পাতার মূল, পাতা, কান্ডসহ সমগ্র গাছই ওষুধিগুনে পরিপূর্ণ। এছাড়াও পুদিনা পাতার আরো অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পুদিনা পাতার অন্যতম একটি উপকারিতা হল এটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। যেটা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়ার বিকাশ ঘটায়।

এছাড়া, আরব্রো ফার্মার ডিরেক্টর সৌরভ অরোরা জানিয়েছেন, “পুদিনা পাতায় ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম। পাশাপাশি, প্রোটিন আর ফ্যাটের পরিমাণও খুব কম । তবে এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বি–কমপ্লেক্স আছে যা ত্বকের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে এবং ইমিউনিটিও বাড়ায় ।

আবার, মুখের স্বাদ বাড়াতেও এটি খুব কার্যকরী। গুণে ভরা এই পাতা আমাদের শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।ঔষধি গুণে ভরা পুদিনা পাতা এবং এর গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে আদিকাল থেকেই। এটির দামও কম এবং পাওয়াও যায় খুব সহজে। এছাড়া, যত দিন যাচ্ছে ততই গবেষণা হচ্ছে পুদিনা ও পুদিনার মতো ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে।

তাই নিচে পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পুদিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুদিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুদিনা পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ উপকারী। এটাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মেন্থল আর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টয়ের মত উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করে। ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

পুদিনা পাতায় রয়েছে এক ধরনের তেল। যেটা পেটের জীবাণু নাশক হিসাবে কাজ করে। পাশাপাশি এটা পাকস্থলিকে শীতল করে। ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা কমতে শুরু করে।

এছাড়া মুখের রুচি বাড়াতেও পুদিনার শরবত বেশ উপকারী। মুখের রুচি বাড়াতে 2 চা চামচ পুদিনার রস, সামান্য লবণ, অল্প কাগজি লেবুর রসের সাথে সমপরিমাণ কুসুমগরম পানি মিশিয়ে সকাল বিকাল 5 থেকে 7 দিন খেতে পারেন।

পুদিনা পাতা থেকে তৈরি ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি, বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সহায়তা করে। পক্ষান্তরে তা খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণে সহায়ক হয়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয়।

আবার পুদিনা পাতায় থাকা ‘মেন্থল’ পেশিকে শিথিল করার মাধ্যমে শারীরিক ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। এই পাতার নির্যাস থেকে তৈরি অসংখ্য ক্রিম মাথা ব্যথা সারাতেও ব্যবহার হয়।

আপনি ক্রিম ব্যবহার করতে না চাইলে সরাসরি পুদিনা পাতার রস কপালে মাখতে পারেন। এছাড়াও মাথা ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতা নাকের কাছে ধরলে কার্যকরী সমাধান পাওয়া যায়।

মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত এটা খেলে বাড়ে উপস্থিত বুদ্ধি, সতর্কতা ও স্মৃতিশক্তি। আবার, মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা পাতা আদর্শ উপাদান হিসেবে কাজ করে। এর নির্যাস সমৃদ্ধ ‘মাউথওয়াশ’ মুখের ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে, সুস্থ রাখে দাঁত ও মাঢ়ি।

এছাড়া, এর কড়া সুগন্ধ মানসিক চাপ, হতাশা দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। রক্তে ‘কর্টিসল’ হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক‌রে জৈবিক মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতাকে সক্রিয় করার মাধ্যমে এই কাজটি হয়।

আবার পুদিনা পাতার ‘এসেন্সিয়াল অয়েলের ঘ্রাণ তাৎক্ষণিক রক্তে ‘সেরোটনিন’ হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনও মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা কমায়।

অ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় তাৎক্ষণিক উপশমে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি শ্বাসপ্রশ্বাস এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সেই জলেরর ভাপ নিতে পারেন। ভাপ নিতে অসুবিধা হলে গার্গলও করতে পারেন। এছাড়া, নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে বুকে কফ জমতে পারেনা।

এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ‘মেন্থল’। যেটা ফুসফুসে আটকে যাওয়া ‘মিউকাস’ ছাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও নাকের ফুলে ওঠা ‘মেমব্রেনকে’ সারিয়ে তোলে মেন্থল। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট দূর হয়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, নতুবা শ্বাসনালীতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।

প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকার কারণে ত্বকের ব্রণের সমস্যা কোমাতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। এই পাতায় উচ্চমাত্রায় স্যালিসাইলিক অ্যাসিড থাকে যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক পরিষ্কার করতেও এটি বেশ কার্যকর।

ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে তাজা পুদিনা পাতা বেটে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া, ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন।

যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাসখানেক এইভাবে লাগালে ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবে। এছাড়া ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও এটি বেশ কার্যকরী।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে পুদিনা পাতায় ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। কারণ বহু বিজ্ঞানীদের দাবি, পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতায় পেরিলেল অ্যালকোহল নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। যেটা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান। এটা দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

এছাড়া, পুদিনা পাতায় মনোটারপিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। যেটা স্তন, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে ফুসফুস, কোলন এবং ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

পুদিনা পাতার উপকারিতা

সামারি

আমরা পুদিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে অলরেডি আমরা জেনেছি। পুদিনা পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। এটার উপকারিতাও অনেক। তবে মাত্রা অতিরিক্ত বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা এভয়েড করাই ভালো।

যেমন: অতিরিক্ত পুদিনা পাতা খাইলে আপনার যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। কারণ, এটি শরীরে যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হরমোন টেসটোসটের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং যৌন আগ্রহ কমে যায়।

আপনি যদি এসিডিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে পুদিনা পাতা এভোয়েড করাই ভালো। এছাড়া অধিক পুদিনা পাতা খাইলে খাদ্যনালীর ভালভের ক্ষতি হতে পারে।

আবার বাচ্চাদের শরীরে বা মুখে পুদিনা পাতার তেল মালিশ করলে শ্বাসকষ্ট হইতে পারে। তাই পুদিনা পাতা খাওয়া বা ব্যবহারের সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button