ত্বকের যত্নে মধুর সমস্ত উপকারিতা এবং ফেসপ্যাক

(ত্বকের যত্নে মধুর বা মুখে মধু মাখার উপকারিতা)

আমরা সবাই চাই, আমাদের মুখের উজ্জলতা বেড়ে মুখ ফর্সা ও দাগহীন থাকুক। বিষেশ করে বর্তমান সময় মহিলাদের মধ্যে এই চাওয়াটা বেশিই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আমাদের প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে বাইরে বের হইতে হয়। আর বাইরে বেরুলেই ধূলা-বালি, সূর্যের তাপ ইত্যাদি কারণে ত্বকের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়।

প্রতিদিনের ব্যস্ততার কারণে হয়তো পার্লারে গিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সুযোগও হয়না সবার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকে পার্লারের কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করে, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করাই ভালো। কারণ প্রাকৃতিক উপাদানের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না।

আর এই প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে মধু খুব কার্যকরী একটি উপাদান। কারণ, মধু প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়াবিরোধী। পাশাপাশি এটাতে আরো আছে, এন্টিসেপ্টিক, এন্টিব্যাক্টেরিয়াল, এন্টিইনফ্লেমেটরি, ময়শ্চারাইজার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৬, এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান।

যেগুলো ত্বকের বলিরেখা, রিংকেল ও ব্রণসহ নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

তাই আজ আমরা ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান মধুর উপকারিতা এবং মধুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফেসপ্যাক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন তাহলে বিস্তারিত জানা যাক।

ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা

Table of Contents

1-দৈনিক ত্বক পরিষ্কার করতে মধু

যে কোনো মৌসুমে সুন্দর ত্বকের জন্য নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে ত্বক পরিষ্কার করা না হলে ত্বকে রেস, ব্রণসহ আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর ত্বক পরিষ্কার করতে সাধারণত আমরা সবাই বাজারের বিভিন্ন ক্লেনজার ব্যবহার করে থাকি।

কিন্তু বাজারের অধিকাংশ ক্লিনজার ত্বকের ভিতর থেকে ময়লা দূর করত সক্ষম হয় না। আবার কিছু কিছু ক্লিনজার ত্বক শুষ্ক করে তোলে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান মধু ব্যবহার করতে পারেন।

কারণ, মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং ব্যাক্টেরিয়ারোধী উপাদান সহ আরবি বিভিন্ন উপাদ। এই উপাদান গুলো লোমকূপ উন্মুক্ত করে এবং বিরক্তিকর ব্ল্যাকহেডস থেকে দূরে রাখে। পাশাপাশি সারাদিন ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক পরিষ্কার করতে মধুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফেসপ্যাক

  • # প্রথমে, হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ভালো ভাবে ভিজিয়ে নিন, তারপর আধ চা-চামচ নির্ভেজাল বা খাঁটি আস্তে আস্তে মধু মুখে গোলাকার ভাবে মালিশ করুন। মালিশ করা হয়ে গেলে, ১ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন এবং ত্বকের স্বাভাবিক যত্ন নিন।
  • # অথবা, দুই চা চামচ মধুর সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাকটি মুখে এবং ঘাড়ে ভালোভাবে ব্যবহার করুন এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লেবু ত্বক পরিষ্কার করে এবং মধু ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে। তাই মধু এবং লেবুর রস পারফেক্ট ক্লেনজার হিসাবে কাজ করে।

2-ব্রণ দূর করতে মধু

আমাদের ত্বকের সমস্যাগুলোর মধ্যে খুব কমন বা অন্যতম একটি সমস্যা হলো ব্রণ। এই ব্রণ খুব সহজেই ত্বকে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।

এটি সাধারণত বুক, কাঁধ, নাক, গাল, কপাল, গলায় বেশি হয়। এক্ষেত্রে মধু বেশ উপকারী। এর প্রদাহরোধী উপাদান ত্বকের অতিরিক্ত তেল ভাব দূর করে এবং ব্রণ থেকে সৃষ্টি ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে।

এছাড়াও, ত্বকের কড়া কালো দাগ ও ‘ব্রেক আউট’ দূর করতে, এমনকি ত্বকের একজিমা বা সিরোসিস উপশমেও মধু বেশ কার্যকর।

ব্রম দূর করতে মধুর কিছু কার্যকারী ফেসপ্যাক

  • # প্রথমে, একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ পানির সাথে আধা চা চামচ মধু এবং আধা চা চামচ দই খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর, এই মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে ত্বকে ঘষে ঘষে ভালভাবে লাগিয়ে নিন। সারারাত রেখে পরদিন সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • # অথবা, প্রথমে সমপরিমাণ আপেলের একটি পেষ্ট তৈরি করে নিন, তারপর এটাতে ৫-৬ ফোঁটা মধু দিন এবং খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। এরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে ৫-৬ বার ব্যবহার করতে পারেন। এই ফেসপ্যাকটি মুখ থেকে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • # অথবা, একটি পাত্রে প্রয়োজন মত নিম পাতার গুঁড়া নিন। এবার এতে প্রয়োজন মত মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর নরম কাপড় বা টিস্যু দিয়ে ভালো করে ত্বক মুছে নিন এবং পরেরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটিও ব্রণ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তারপরও, ব্রণের সমস্যা যদি বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি একটি হরমোন জনিত রোগ।

3-বয়সের ছাপ দূর করতে মধুর উপকারিতা

দিন পেরোলে বয়স বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় শরীরের অনেক কিছুই। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস যেমন থমকে যেতে চায়, তেমনি ত্বকের লাবণ্যও আর আভা ছড়ায় না আগের মতো। আস্তে আস্তে ত্বক ড্যামেজ হতে শুরু করে। আর মধু ত্বকের ড্যামেজ সারিয়ে তুলতে খুব ভালো কাজ করে এবং ত্বককে পুনরায় উজ্জীবিত করে তোলে।

এছাড়াও, যাদের ত্বক শুষ্ক, তাঁদের ত্বকে বয়সের ছাপ একটু আগেই বোঝা যায়। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। আর শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে মধুর গুরুত্ব অনেক।

শুষ্ক ত্বকের যত্নে মধুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফেসপ্যাক

  • # ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ দই, আধা চা চামচ আমন্ড অয়েল ও ১টি ডিমের কুসুম, একসঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। এটা আঠালো হয়ে গেলে ভালোভাবে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর
    পর ধুয়ে ফেলুন। মধু ত্বকে স্নিগ্ধ করবে, পাশাপাশি আমন্ড আর ডিমের কুসুম ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবে।
  • # অথবা, এক টেবিল-চামচ চিনি এবং এক টেবিল-চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এটা আলতোভাবে মুখে লাগান। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চিনি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি, মধু লোমকূপের ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
  • # অথবা, এক চা মচ মধু, ২ চা চামচ টক দই, ১ চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ এবং এর সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের সবটুকু তেল ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট করে নিন। এই ফেসপ্যাকটি মুখে, গলায় ও ঘাড়ে ভালো ভাবে লাগিয়ে রেখে দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরপরে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কার্যকরী ফলাফল পেতে এই প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
  • # অথবা, শুধু মাত্র মধুও ব্যবহার করতে পারেন, ২/৩ চামচ মধু নিয়ে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে রোজ ব্যবহার করতে পারেন, অথবা একদিন পরপরও ব্যবহার করতে পারেন।

4-ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে মধু

মধুর এমন কিছু প্রাকৃতিক গুন রয়েছে, যেগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করে। এছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধংস করতে মধু বেশ কার্যকরী। মধু হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এটি বাতাস থেকে জলীয়কণা ত্বকের ভিতরে টেনে ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

অনেক বিউটি এক্সপার্টদের মতে, ত্বকের জন্য মধুর থেকে উপকারী জিনিস আর একটিও নেই। মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। এই উপাদান ত্বককে শুধু উজ্জ্বলই করে না, বরং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও দূর করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক

  • # এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখ ম্যাসাজ করুন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, আপনার ত্বক এক নিমিষেই উজ্জ্বল হয়ে যাবে।
  • # অথবা, দুই টুকরো পেঁপে ভালোভাবে ব্লেন্ডার করে, এর সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন প্যাক তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এটা বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে।
  • # অথবা, ১ টেবিল-চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে বা শরীরে বৃত্তাকারে হালকাভাবে মালিশ করে নিন। কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হবে। কারণ, মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এনজাইম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেগুলো ত্বককে পরিষ্কার, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেকিং সোডাও ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আবার, এটি ত্বকের মৃতকোষ তুলে নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে।

5-তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই উপকারী

মধু তৈলাক্ত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, অস্বস্তিকর ‘ব্ল্যাকহেডস’ এবং লালচে দানা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে টানটান করে ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। মধুর প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ‘এক্সফলিয়েট’ করার ক্ষমতা থাকায়, এটা ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমায়। এটি ত্বকের ছিদ্র উন্মুক্ত করে ও বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, রাসায়নিক সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফেসপ্যাক ত্বকের অয়েলি ভাব কমায়। কিন্তু এগুলো ত্বকের ক্ষতিও করে। রাসায়নিকের ব্যবহারের ফলে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তা তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষতির চেয়েও বেশি ভয়াবহ। তাই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

তৈলাক্ত ত্বক দূর করতে মধুর কিছু কার্যকরী ফেসপ্যাক

  • #একটি লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন। তাতে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর এটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। ত্বক টান টান ভাব হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু আপনার ত্বক উজ্জ্বল করবে। পাশাপাশি, লেবুর প্রাকৃতিক ব্লিচিং গুন ত্বককে করবে আরও ফর্সা।
  • # অথবা, এক টেবিল চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ টকদই ভালো ভাবে মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর, হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর।
  • # আবার, গরমের সময় ত্বকের কালচে ভাব ও মলিনতা দূর করতে নিয়মিত কলা, পেঁপে এবং মধুর তৈরি একটি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ, কলা, পেঁপে আর মধু যেমন শরীরে পুষ্টি জোগায়, তেমনি রোদে পোড়া ত্বকের যত্নেও এগুলো খুব উপকারি।

6-এক্সফলিয়েন্ট হিসেবে মধু

মধু এক্সফলিয়েন্ট হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। পাশাপাশি, এটি খুব কোমলতার সাথে ত্বককে এক্সফলিয়েট করে। ত্বকের সংস্পর্শে এলে ত্বকের তাপে মধুর কণিকাগুলো খুব সহজেই ভেঙে যায় এবং ত্বককে এক্সফলিয়েট করে।

বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন স্ক্র্যাব আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু মধু কখনোই ত্বকের ক্ষতি করবে না। এটা ত্বকের অস্বস্তিকর জ্বালাভাব দূর করতেও সাহায্য করে।

এক্সফলিয়েট হিসাবে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক

  • # প্রথমেই ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে পাতলা করে মধুর প্রলেপ দিয়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং আলতো করে মুখের পানি মুছে নিন। সপ্তাহে দুই-একবার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
  • # অথবা মধুর সঙ্গে অ্যাভোকাডো, লেবু বা অ্যাপল সাইডার মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন।
  • # এছাড়াও, হাত পা এক্সফলিয়েট করার জন্য ২ চামচ মধু এবং এক চামচ বেকিং সোডা ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। এবার হাতে পায়ে লাগিয়ে ৫-৭ মিনিট হালকা করে মাসাজ করুন করার পর ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি শুধু হাত-পা নয়, বরং গলা, ঘাড় পিঠ, পেট, বগল অর্থাৎ শরীরে সমস্ত জায়গায় ব্যবহার করা যাবে। তবে এটি সপ্তাহে এক থেকে ২ দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

7-ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে

ত্বকের যত্নে মধুর অন্যতম একটি উপকারিতা হলো সানবার্ন বা রোদে পোড়া সমস্যার সমাধান। রোদে পোড়া ত্বকের সমস্যা এখন নিত্যদিনের। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের প্রতিদিনই ঘরের বাইরে বেরইতে হয়। আর তখন সারা দিনের ধুলোবালু ও রোদের তাপে ত্বকের মধ্যে একটা পোড়া পোড়া ভাব তৈরি হয়।

ফলে, ত্বক নিজস্ব রঙ ও উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। ত্বকের রং ধীরে ধীরে কালচে হতে থাকে। রোদের তীব্র অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের এই সমস্যা হয়।

এছাড়া, কড়া রোদ ত্বকে ছোপ ছোপ দাগের জন্ম দেয়। আর মধুর ফেসপ্যাক ত্বকের এই দুটো জিনিসই দূর করতে সক্ষম। কারণ, এর ভেতরে থাকা অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের কালো দাগ কমাতে এবং টিস্যু পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

ত্বকের রোদে পোড়া ভাব কমাতে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক

  • # প্রথমে, ২ টেবিল চামচ টমেটো কুচি, ১ টেবিল চামচ মধু এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর এটা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর হবে এবং ত্বক ফর্সা ও টানটান হবে।
  • # অথবা, ১ টেবিল চামচ কমলার রস এবং আধা টেবিল চামচ মধু ভালো ভাবে মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পোড়া ত্বক আবার আগের মতো রং ফিরে পাবে।
  • # এছাড়া, একটি পাত্রে দুই চা চামচ ওটস, এক চা চামচ মধু ও দুই টেবিলচামচ কাঁচা দুধ এক সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ওটস ভিজে নরম হয়ে গেলে, চটকে নিয়ে মিশ্রণটি ত্বকে লাগান। 30 মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের তামাটে ভাব দূর হবে। মিশ্রণটি রাতে ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাবেন।

8-ময়েশ্চারাইজার হিসেবে মধু বেশ কার্যকরী

প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও মধু অনেক কার্যকরী। এটি বাতাস থেকে জলীয়কণা ত্বকের ভেতরে টেনে নেয় যা ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, মধুতে থাকা চিনি হিউমেক্টেন্ট ও ইমোলিটেন্ট হিসেবে কাজ করে, যেটা ত্বকে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই, ত্বকে মধুর ফেসপ্যাক লাগালে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়।

ত্বক ময়েশ্চারাইজার করতে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক

  • # প্রথমে, ১ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ মধু ও অর্ধেক কলা একসাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন, তারপর মুখ, গলা এবং ঘাড়ে ভালো ভাবে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
  • # অথবা, চার টেবিল চামচ কাঁচা দুধ, চার টেবিল চামচ টকদই, দুই টেবিল চামচ ওটস একসাথে মিশিয়ে চার ঘণ্টার মতো রেখে দিন। চার ঘণ্টা পর, ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন, তারপর এটার সাথে ২ টেবিল চামচ মধু মেশান। এরপর ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর, কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করবে, পাশাপাশি ত্বক ফর্সাও করবে।
  • # অথবা, শুষ্ক ত্বকে নিয়মিত ১ টেবিল চামচ পরিমাণ মধু ভালো ভাবে লাগিয়ে পনেরো থেকে বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে কোমল ও নমনীয়।

9-ত্বকের বলিরেখা দূর করতে মধু

একজন মানুষের যখন বয়স বাড়ে, তখন কোষের কার্যক্ষমতা কমে যায়। অর্থাৎ, জৈবিক ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই প্রক্রিয়াটি শরীরে, বিশেষ করে ত্বকে খুব সহজেই ফুটে ওঠে। মানুষের যখন বয়স হয় তখন তার শরীরের এনজাইম গুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর এই সময় ত্বকে ফুটে উঠে বলিরেখা।

এছাড়াও, অতিরিক্ত ধূমপান করা, পানি কম খাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন, কম ঘুমানো, ত্বকে অতিরিক্ত আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব ইত্যাদির কারণেও বেশি বয়সের আগেই মুখে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা দেখা যায়। আর আমরা আগেই জেনেছি, ত্বকের এই বলিরেখা দূর করতে মধু খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ত্বকের বলেরেখা দূর করতে মধুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক

  • # ১ টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ মিল্কক্রিম মিশিয়ে নিন, তারপর ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি মুখের বলি রেখা দূর করতে খুবই কার্যকরী।
  • # অথবা,২ টেবিল চামচ ডিমের সাদা অংশ, এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। মুখে লাগানোর পর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পান দিয়ে মখ ধুয়ে ফেলুন। ডিমের গন্ধ দূর করার জন্য কয়েক ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।
  • # অথবা, ১০ টি কাঠবাদাম ৮ ঘণ্টা কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর খোসা ছাড়িয়ে এতে ১ চা চামচ কাঁচা দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মিহি পেস্ট করে নিন। মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন লাগান এই মাস্কটি।
  • # অথবা, একটি পাকা কলা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন, এতে ২ টেবিল চামচ টক দই এবং ২ টেবিল চামচ মধু মেশান। এই এই ফেসপ্যাকটি মুখ ও গলায় লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ দিন লাগাতে হবে।
  • # আবার,‌শুধু মধু আলতো হাতে প্রতিদিন মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করলেও বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।

10- ঠোঁটের যত্নে মধু

ঠোট মানুষের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ঠোঁটের ত্বক শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের থেকে অনেক বেশি বেশি নাজুক ও কোমল হয়ে থাকে। তাই, ঠোঁটকে সুন্দর রাখতে বাড়তি কিছু যত্ন অবশ্যই দরকার।

মধু দিয়ে তৈরি কিছু ফেসপ্যাক আছে, যেগুলো ঠোঁটের কালো দাগ দূর করে, পাশাপাশি ঠোঁটকে গোলাপি করতে সাহায্য করে। এমনকি এটি ঠোঁটকে নরম ও কোমল রাখতেও সাহায্য করে। তাই ঠোঁটের যত্নে মধুর বিভিন্ন লিফপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

ঠোঁটের যত্নে মধুর লিপপ্যাক

  • # প্রতিদিন হাতে একটু মধু নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। খুব বেশি অস্বস্তি বোধ না হলে ধোয়ার দরকার নেই। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এছাড়া মধু লিপবাম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এক চামচ আমন্ড তেলের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে ফাঁটা ও রুক্ষ ঠোঁটে ব্যবহার করুন। এই মিশ্রণটি ঠোঁটের সতেজতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
  • # অথবা, ১ টেবিল চামচ গোলাপজলের সঙ্গে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট আকারে ব্যবহার করুন। ১০ মিনিট রেখার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • # অথবা, এক চা চামচ পরিমাণ গ্লিসারিন এবং এক চা চামচ পরিমাণ মধু একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপর, এই মিশ্রণটি ঠোঁটে ম্যাসাজ করে লাগান। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ঠোঁট হাইড্রেট এবং ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করবে।

সামারি

উপরের সমস্ত ফেসপ্যাক গুলো প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি তাই, বয়স ও লিঙ্গভেদে সবাই এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, ত্বকের ধরন অনুযায়ী ত্বকের সাথে মানানসই ফেসমাস্কটি বেছে নিতে হবে। তাছাড়া কিছু কিছু ফেসমাস্ক সপ্তাহে দুদিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

আবার, কিছু ফেসমাস্ক সপ্তাহে তিন বা চার দিনের বেশি লাগানো ঠিক নয়। আবার কিছু ফেসপ্যাক আছে যেগুলো প্রতিদিন লাগানো যায়। তাই ফেসমাস্ক লাগানোর আগে ভালোভাবে দেখে নিন সেটি সপ্তাহে ক’দিন লাগাতে পারবেন।

মধুর সাধারণত কোন সাইড ইফেক্ট নেই, তবে আপনার যদি অ্যালারজির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে মুখে বুভারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নেয়ায় ভালো। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা অনেক, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাজারের যেকোনো মধু আপনার ত্বকের উপকার করতে সক্ষম।

প্রক্রিয়াজাত মধু ত্বকের তেমন উপকারে আসে না। প্রক্রিয়াজাত নয় ও পুরোপুরি খাঁটি- এমন মধু ত্বকে লাগাতে হবে, তবেই ত্বক সুন্দর হবে। মধু ত্বকে ব্যবহারের পরে অবশ্যই তা ঠিক মতো ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ লোমকূপে মধু আটকে থাকলে তা থেকে ‘ব্রেইক আউট’ বা ব্রণ দেখা দিতে পারে। ধন্যবাদ

Leave a Comment