ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো কি কি

(ডায়াবেটিসের লক্ষণ)

মানুষের শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে অথবা ইনসুলিন নামের হরমোনের অভাব ঘটলে অথবা উভয়ের মিলিত প্রভাবে রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে।

শারীরিক পরিশ্রম, পরিমিত খাবার ও ক্ষেত্রবিশেষ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্থ থাকা যায়। তবে সবার আগে যেটি দরকার সেটি হল রোগটি শনাক্ত করা। অনেক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী নিজেই জানেন না যে, সে রোগটি পুষছেন বা তার শরীরে ডায়াবেটিস আছে। তাই এই রোগটিকে নিরব ঘাতক বলা হয়ে থাকে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, এই রোগের সঙ্গে প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো সমস্যা দেখা যায়। এটি রোগীর অজান্তেই কাজ করে চলে এবং সঠিকভাবে সচেতন না হলে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগ আগেভাগে নির্ণয় করতে সক্ষম হলে রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। এতে রোগীও সুস্থ থাকতে পারে।

তাই চলুন ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

শরীরে ক্লান্তি অনুভব হওয়া:- আপনি পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও যদি আপনার সারাদিন অস্বাভাবিক ক্লান্ত বোধ হয় তাহলে‌ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটি ডায়াবেটিসের অন্যতম একটি লক্ষণ। যেহেতু, এই সময় শরীর শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে না, তাই এই সমস্যাগুলো হয়।

ঘন ঘন প্রস্রাব:- সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ সারাদিনে ৬-৭ বার প্রস্রাব করেন। পরিবেশ বা পরিস্থিতি নির্ভর করে দিনে ৪-১০ বার প্রস্রাবকেও স্বাভাবিক ধরা হয়। এর বেশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কারণ, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম লক্ষণ। রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে সেটি বের করে দিতে চায়। এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এই সময় পানির বিপাশাও বেড়ে যায়।

চোখের দৃষ্টি শক্তি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া:- রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে চোখে এর প্রভাব পড়তে পারে। যদি চোখের মণি স্ফীত হয় এবং আকারের পরিবর্তন হয় তবে হঠাৎ করে চোখে ঝাঁপসা দেখার সমস্যা হতে পারে।

বার বার ক্ষুধা লাগা:- ডায়াবেটিসের প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া। কারণ, শরীরে যখন ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীর আর শর্করা ধরে রাখতে পারে না।

শরীরে শর্করার প্রয়োজন হয় শক্তি জোগাতে। আর যখন শর্করার অভাব দেখা দেয় তখন শরীরের শক্তি হ্রাস পায়। ফলে ক্যালরির চাহিদা বেড়ে গিয়ে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে।

শরীরের ক্ষত শুকাতে অনেক দেরি হওয়া:- শরীরের যেকোনো কাটা-ছেঁড়া ও ক্ষতস্থান শুকতে বা সেরে উঠতে যদি অনেক বেশি সময় লাগে তবে তা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

কারণ, রক্তে শর্করার অসামঞ্জস্যতার ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ (ইনফেকশন) দেখা দেয়। আর এই সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

এছাড়াও, যেকোনো কিছুতে বিরক্তি বোধ করা, চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব হাওয়া, রাতে প্রস্রাবের কারণে ঘুম ভাঙ্গা, বমি বমি ভাব হওয়া, মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া, মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া, ত্বকে কালচে ভাব হওয়া ইত্যাদি ডায়াবেটিসের লক্ষণ বলে বিবেচিত হয।

মাত্রাতিরিক্ত ওজন হ্রাস পাওয়া:- খাদ্যাভ্যাসে কোনো ধরনের বিশেষ পরিবর্তন বা শরীরচর্চা ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম লক্ষণ। আপনার যদি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ২০ পাউন্ড ওজন কমে যায়‌ তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান।

শিশুদের ক্ষেত্রে:- যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি, ফুফু, ভাই-বোনের ডায়াবেটিস আছে, (এক কথায় পরিবারের অন্য কারো ডায়াবেটিস আছে এমন) যাদের জন্মের সময় ওজন কম ছিল, যাদের শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে, এবং যেসব শিশুর মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। এই সমস্ত শিশুদের অবশ্যই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস:- আমরা অনেকেই জানিনা গর্ভাবস্থায় কখন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গর্ভধারণের পরপরই একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে‌।

পাশাপাশি গর্ভকালীন ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে আরো একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এছাড়া, যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয় তাঁদের প্রসবের ছয় থেকে বারো সপ্তাহ পর আবারও পরীক্ষা করতে হবে

কারা বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে অছেন

আমাদের মধ্যে যে কেউ যেকোনো বয়সে যেকোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে নিম্নোক্ত শ্রেণির ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

  • প্রথমত বংশভিত্তিকি ভাবে। যাদের বংশে বিশেষ করে বাবা-মা বা রক্ত সম্পর্কিত নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যাক্তিদের।
  • সাধারণত যেসব মহিলার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ছিল আবার যেসব মহিলা ৯ পাউন্ডের বেশি ওজনের বাচ্চা প্রসব করেছেন এমন মহিলাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
  • মাত্রা অতিরিক্ত মোটা বা ওজন অনেক বেশি এমন ব্যক্তিদের। বিশেষ করে যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ করেন না এমন ব্যক্তিদের।
  • যারা বহু দিন ধরে কর্টিসোল-জাতীয় ওষুধ সেবন করে আসছেন এমন ব্যক্তিদের।
  • যাদের রক্তচাপ আছে এবং রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকে তাদেরও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, ভাইবোনের ডায়াবেটিস আছে, যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কায়িক পরিশ্রম করে না যারা, যাদের রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল ৩৫–এর নিচে এবং ট্রাইগ্লিসারাইড ২৫০–এর বেশি।

যাঁদের হৃদ্‌রোগ রয়েছে, যেসব নারীর গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়েছিল। এই সমস্ত মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এছাড়াও, দীর্ঘ গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দ্রুত নগরায়ন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এবং ক্রমাগত মানসিক চাপের ফলে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সামারি

উপরোক্ত লক্ষণগুলির যেকোনো একটি লক্ষণ মিলে গেলেই যে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি ডায়াবেটিস প্রমাণিত হয় তাহলেও চিন্তার কিছু নেই।

সঠিক নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্থ থাকা যায়। তবে রোগটি যদি নির্ণয় করা না হয় তাহলেই বিপদ। কারণ এতে রোগীর অজান্তেই মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলতে পারে। যার কারণে মৃত্যুও হতে পারে। তাই সচেতন থাকুন এবং নিয়মমাফিক জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করুন।

Leave a Comment