চুমুর খুব গুরুত্বপূর্ণ 12টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

চুমুর উপকারিতা

চুম্বন হল দুই ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে কাউকে আদর বা স্নেহ প্রকাশ করা। সাধারণভাবে প্রেম, কাম, স্নেহ, অনুরাগ, শ্রদ্ধা, সৌজন্য অথবা শুভেচ্ছা প্রকাশার্থে অন্য কারো চিবুক, অধরোষ্ঠ, করতল, কপাল বা অন্য কোন অঙ্গে ঠোঁট স্পর্শ করা।

মানব সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান ও উৎসবে চুম্বন প্রথার প্রচলন হয়ে এসেছে। চুমু মানবীয় ভালবাসার এক অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ।

মানবসমাজে চুম্বনের শুরুটা কোথায়, আর কীভাবে হয়েছে এটা বলা খুবই মুশকিল। তবে ১৯৬০ সালে ইংরেজ প্রাণিবিজ্ঞানী ডেসমন্ড মরিস প্রথম প্রস্তাব করেন যে, চুম্বন সম্ভবত উদ্ভূত হয়েছে আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেট মায়েদের খাবার চিবানো আর সেই খাবার ছোট বাচ্ছাদেরকে খাওয়ানোর মাধ্যমে।

চুম্বন আবেগ, ভালোবাসা ও আদর প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলেও, চুমুর আরো অন্যান্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই, চুমু স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু উপকারী সেটা সবার জানা অতীব জরুরী।

তাই চলুন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে চুমুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-

চুমুর উপকারিতা

#1-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।

আর এই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ভালবাসার চুমু। শুধু তাই নয়, চুমু খেলে আইজিই অ্যান্টিবডি হ্রাস পায়, এবং মাস্ট সেল থেকে হিস্টারিনের ক্ষরণও কমে। ফলে অ্যালার্জির হাত থেকে রক্ষা পায় আমাদের শরীর।

বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, চুমুর মাধ্যমে দুজনের মধ্যে সুষ্ঠু বিপাকক্রিয়া শুরু হয়। বিশেষ করে চুমুর মাধ্যমে যদি ঘটনা যৌনতার দিকে গড়ায়, তবে বহু ক্ষতিকর ভাইরাসের পতন ঘটে। পাশাপাশি, চুমুর মাধ্যমে নারী-পুরুষের একে অপরের থুথু বিনিময় হয়। এটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

২০১০ সালে মেডিক্যাল হাইপোথিসিস জার্নালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কোন গর্ভবর্তী দম্পতি যদি নিয়মিত চুমু খায় তাহলে গর্ভের শিশুটি সাইটোমেগালোভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।

#2-স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে

স্ট্রেস হলো সাধারণ ভাবে মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরে তৈরি হওয়া একটি প্রতিক্রিয়া। যেটা হতে পারে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক। মানসিক চাপ বাড়লে আমাদের শরীর সেটাকে যুদ্ধাবস্থা ধরে নিয়ে অনেকগুলো হরমোন আর রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটায়। যার ফলে শরীরে হঠাৎ অনেক উত্তেজনার তৈরি হয়। এই সময় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, আর আমরা কোনো কিছুতে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারি না।

আর এই স্ট্রেস কমাতে চুম্বন দারুন কার্যকরী। বিশেষজ্ঞদের মতে, চুমু আমাদের শরীরের কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, চুম্বনের সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন আর সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ হতে থাকে। যা অবসাদ বা দুশ্চিন্তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, শারীরিক অনুশীলন করার মতোই চুমু শরীরে ‘‌হ্যাপি হরমোন’‌ নিঃসরণ করে। যারা চুমু খেতে ভালোবাসেন এবং নিয়মিত চুমু খান তাদের ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার সমস্যা হয় না। তারা অন্যদের তুলনায় বেশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন। চুমু খাওয়ার ফলে আমাদের মন থেকে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।

এছাড়াও চুমু খাওয়ার মাধ্যমে আমরা গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারি। যেটা আমাদের শরীরকে রিলাক্স হতে সহায়তা করে। যদি কোন কারণে কেউ মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত থাকে তাহলে তার কোনও মনোবিদের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। সে তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে চুম্বন করলেই তার মানসিক হতাশা দূর হয়ে যাবে।

#3-যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

যৌন মিলন হচ্ছে একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। যা দ্বারা মূলত যৌনআনন্দ বা প্রজনন বা উভয় ক্রিয়ার জন্য একজন পুরুষের উত্থিত শিশ্ন একজন নারীর যোনিপথে অনুপ্রবেশ করানো ও সঞ্চালনা করাকে বোঝায়। যৌন মিলন যে স্বামী-স্ত্রীকে শারীরিক আনন্দ দেয় এটি নতুন করে বলার কোনো প্রয়োজন নাই। তবে চুমু তাদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। আর, সুস্থ যৌন জীবন শারীরিক সুস্থতার অন্যতম লক্ষণ।

২০১১ সালে কিনসে ইনস্টিটিউটের একটি স্টাডিতে বলা হয়। যারা বেশি বেশি চুমু খান, তাদের মাঝে যৌনতৃপ্তি খুব বেশি থাকে। এদের সুখের মাত্রাও অন্যদের চেয়ে তিনগুণ বেশি থাকে। চুমু আমাদের শরীরে Testosterone নামক সেক্স হরমোনের ক্ষরণ ঘটায়। যেটা যৌনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

২০০৭ সালে এভোলুশনারি সাইকোলজি জার্নালে বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভায় ফ্রেঞ্চ কিস করতে দারুণ পছন্দ করে। কিন্তু পুরুষরা স্বল্পমেয়াদি সম্পর্ক গড়তে ফ্রেঞ্চ কিসের সময় জিহ্বার সংযোগ বেশি ঘটাতে চান।

এছাড়া অন্য এক গবেষণায় বলা হয়, দু’জনের মুখের স্যালিভা উভয়ের দেহে টেসটোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, মানুষের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে যৌনতা। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। আর যৌনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চুমু।

#4-ক্যালোরি ক্ষয় করতে চুমুর উপকারিতা

ক্যালোরি হলো কোনো খাদ্য থেকে আমরা কি পরিমান এনার্জি পায়, সেটা মাপার একটি একক। আর পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায়, ক্যালোরি হলো শক্তি (বিশেষ করে তাপশক্তি) মাপার একটি একক। ১ কেজি পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়াতে যে পরিমাণ তাপ শক্তি দরকার হয়, তার পরিমাণ হলো ১ ক্যালোরি। শারীরিক চাহিদার চাইতে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন বেড়ে যায়। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

আর এই ক্যালরি বার্ন করতে চুমু বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। একটি সমীক্ষার পর মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করেন। যাঁরা নিয়মিত অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে চুমু খান, তাঁদের প্রতি মিনিটে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোগ্রাম ক্যালোরি বার্ন হয়।

আবার, অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের মতে, গভীর চুমুর মাধ্যমে মিনিটে ৪-৬ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন করা সম্ভব। তবে, কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে ও কতক্ষণ একটানা চুমু খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করবে কতটা ক্যালোরি ঝরবে।

আমরা জেনেছি, এক মিনিট চুমু খেলে ৪ থেকে ৬ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন করা সম্ভব। যেখানে ট্রেডমিলে দৌড়ালে আপনার মিনিটে ১৩ থেকে ১৫ ক্যালোরি বার্ন হয়। মিনিটে ৬ ক্যালোরি বার্ন করা কিন্তু একেবারে সহজ কাজ নয়। তবে চুমু খেয়েই যদি আপনি মিনিটে ৬ ক্যালোরি বার্ন করতে চান, তাহলে আপনাকে বেশ পরিশ্রম করে চুমু খেতে হবে।

আমরা বাচ্চাদের যেভাবে আলতো করে চুমু খাই তাতে কিন্তু আপনার এক ফোঁঁটাও ক্যালোরি বার্ন হবে না। তাই ক্যালরি বার্ন করতে পার্টনারের সাথে গভীর চুমুতে লিপ্ত হতে হবে।

#5-তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে

তারুণ্য জীবনের সেই সময় যখন একজন মানুষ তরুণ থাকে। আরেক ভাবে বলা যায়, যার মধ্যে সৌন্দর্য, সজীবতা, জীবনীশক্তি উদ্দীপনা ইত্যাদি থাকে সেই তরুণ। আর চুমু চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখতে বেশ কার্যকরী।

চুম্বনের সময় মুখের ৩৪টি পেশি এবং ১১২টি পসট্রুয়াল পেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ফেসিয়াল পালসি, মাসকুলার ডিসটোনিয়ার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

আবার, মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও চুম্বন অত্যন্ত কার্যকরী। চুম্বনের সময় মুখের ভিতর প্রচুর পরিমাণে লালা নিঃসরণ হয়। একই সঙ্গে মুখের ভিতর নানা রকম উৎসেচক ক্ষরিত হয়। যেটা মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

গবেষকরা বলেন, এই ধরনের কিসিং এর সময় ৩০টি মাসলের একসাথে ব্যায়াম হয়। চুমু খেলে মুখে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে কোলাজেন উৎপাদনও বাড়ে। কাজেই মুখের ত্বক টানটান ও সতেজ থাকে।

এছাড়া চুমু খেলে মুখের রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়, ফলে আপনার মুখের দ্যুতি বেড়ে যায় এবং বয়সের কারণে সৃষ্ট মুখের বলিরেখাও কমে যায়। এছাড়াও, আমাদের কপালের ত্বক থেকে শুরু করে চোয়ালের মসৃণতা তৈরি পর্যন্ত এর উপকারিতার রয়েছে। চুমু খাওয়ার সময় যেহেতু মুখের মাংস পেশীর সংকোচন-প্রসারণ হয়, তাই এটি মুখের আকৃতি আরও সুন্দর করে তোলে।

#6-ভালোবাসার অটুট বন্ধন তৈরি হয়

ভালবাসার বন্ধন শুধু একটি ভালবাসারই নয়, এটি একটি বিশ্বাসেরও বন্ধন। সময়ের সাথে সাথেই নর – নারীর এই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। সম্পর্কটি প্রেমের হোক বা দাম্পত্য জীবনের যেকোন ক্ষেত্রেই একে আজীবন টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে চুমু বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুমু দিলে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যকার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। চিকিৎসকদের মতে, চুমুর সময় উভয়ের দেহে অক্সিটোসিন হরমোন উৎপাদন হয়। এটি একে অন্যের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।

পাশাপাশি, চুম্বনকে মনের খোরাকের পাশাপাশি শরীরের খোরাকও বলা হয়। চুমুর মাধ্যমে এন্ডোফিনস হরমোনের ক্ষরণ ঘটে। যা মানুষকে সুখী করে তোলে। তাই ভালোবাসার মানুষটিকে চুম্বনের মাধ্যমে সুস্থ, দীর্ঘ ও সুখী জীবন লাভ করা সম্ভব।

#7-দাঁত মজবুত করতে চুমু খাওয়ার উপকারিতা

একজন স্বাস্থ্যবান মানুষের জন্য দাঁত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। দাঁত ভালো থাকলে মানুষ নানা সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন, আনন্দে দিন কাটাতে পারেন এবং আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন। তাছাড়া দাঁত সরাসরি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই জন্য আমাদের সব সময় দাঁতের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। আর চুম্বন দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যে যথেষ্ট কার্যকরী।

আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, খাবারের পর দাঁত ব্রাশ করার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ চুমু খাওয়া। কারণ চুমুর সময়, একে অন্যের লালা বিনিময়ে মুখের ব্যাকটেরিয়ার আদান-প্রদান হয়। এতে শরীরে অন্যের লালা প্রবেশের মাধ্যমে এক প্রকার এন্টিবডি তৈরি হয়, যেটা জীবাণু ধ্বংস করতে বেশ কার্যকারী।

পাশাপাশি, চুমু খাওয়ার সময় লালা ক্ষরণ বেড়ে যায়। যেটা মুখ পরিষ্কার রাখে, দাঁত এবং মাড়ি থেকে নোংরা ভাব দূর করে। অনেকেরই দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্ষয় রোগ থাকে। আর এর ফলে দাঁতে ব্যথা অনুভূতি হয়।

চুমু খাওয়ার সময় যে স্যালিভা বা লালা নির্গত হয়, তার মধ্যে নিউট্রালাইজেস নামক একপ্রকার অ্যাসিড থাকে। যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আর এটা দাঁতের ব্যথা ভাব কমাতে সাহায্য করে। তাই দাঁতের যত্ন নেওয়ার জন্য নিয়মিত সঙ্গি বা সঙ্গিনীকে চুমু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

#8-হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে চুমুর উপকারিতা

শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে মস্তিষ্ক এবং হার্ট সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর যেকোনো একটি বিকল হলেই মহাবিপর্যয় নেমে আসে জীবনে। তাই হার্ট সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে নানামুখী গবেষণাও চলছে প্রতিনিয়ত।

ব্রিটেনের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, চুম্বন আমাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। চুমুর সঙ্গে হৃদয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই দেখা গেছে, যারা হামেশাই একে অপরকে চুমু খান তাদের হৃদপিণ্ড অনেক বেশি সুস্থ থাকে।

পাশাপাশি, চুমু খাওয়ার সময় হৃৎপিণ্ড অধিক পরিমাণে সক্রিয় হয়ে ওঠে। যার ফলে হৃদপিন্ডের ব্যায়ামও হয়। ফলে, রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।আবার, এটি আপনার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন নিয়মিত হতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, চুমু খাওয়ার ফলে শরীরের অক্সিটোসিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে আমাদের স্নায়ু শান্ত থাকে। তাই নিয়মিত সঙ্গি বা সঙ্গিনীকে চুমুর খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক হৃৎপিণ্ড বজায় রাখা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

#9-ব্যথা কমাতে সাহায্য করে

একটি অপ্রীতিকর অনুভূতির নাম হলো ব্যথা। অনেক সময় ব্যাথা অনেক যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলে। তাই, অনেকেই বাসায় মজুদ রাখেন পেইনকিলার ঔষধ। ডাক্তারদের মতে, এই পেইনকিলার ঔষধে অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই ব্যথা কমাতে সাহায্য নিতে পারেন চুমুর।

ব্রিটেনের নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্সের বিজ্ঞানীদের দাবি, চুমু খেলে অ্যান্ড্রেনালাইন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। আর এই হরমোন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, চুমু মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। তাই ব্যথা কমাতে নিয়মিত প্রিয় জনের kiss করার অভ্যাস করতে পারেন।

#10-অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়

এলার্জি একটি সর্বজনীন বহুল প্রচলিত শব্দ। লাখ লাখ মানুষের কাছে একটি অসহনীয় ব্যাধি। কারও কারও ক্ষেত্রে এলার্জি সামান্যতম অসুবিধা করে। আবার কারো ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। জাপানি এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, চুম্বন অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, মৌসুমী অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারে চুম্বন।

জাপানের অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পার্টনারের ঠোঁটে নিয়মিত চুমু খাইলে শ্বসনতন্ত্র এলার্জিমুক্ত থাকে। শ্বাসনালীতে এলার্জির পরিমাণ বাড়াতে হিসটামিন নামের এক নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব পদার্থ কাজ করে। পার্টনারের ঠোঁটে চুমু খাইলে এই জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যায়।

ফলে এলার্জি আক্রান্ত পেশীগুলো জীবাণুমুক্ত থাকে। এছাড়াও, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে চুমু খেলে রক্তে অ্যালার্জি প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তেরি হয়। আর এই অ্যান্টিবডি অ্যালার্জি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

#11-রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

রক্তচাপ মানুষের স্বাস্থ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ব্লাড প্রেসার হলো মানুষের শরীরের ধমনীর প্রবাহ। হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত যখন শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হয়, তখন ধমনীর দেয়ালে চাপ প্রয়োগ করে এবং এই চাপই রক্তচাপ নামে পরিচিত। কিন্তু উচ্চরক্তচাপ মানুষের মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

চুম্বন রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। কারণ, চুমু খাওয়ার সময় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। পাশাপাশি, শরীরের শিরা এবং ধমনীগুলো প্রসারিত হয়। এতে শরীরে রক্ত স্বচ্ছন্দে প্রবাহিত হতে পারে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, চুম্বন হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিক গতি নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

আবার, মানুষের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে যৌনতা। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। আর যৌনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চুমু। মানে চুমু শুধু হৃদয়কে ভাল রাখে তাই নয়, এটা শারীরিকভাবেও সুস্থও রাখে।

চুমু খেলে যেহেতু রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, তাই তলপেটে চাপ কম পড়ে। ফলে ক্রয়ম্পের চাপ অনেকটা কমে যায়। তাই পিরিয়ডের সময় কষ্ট পেলে চুমু খেতে পারেন। এছাড়াও, অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চুমু খেলে শরীরের ক্লান্তি তুলনামূলকভাবে কমে যায়।

#12-চুমুর অন্যান্য উপকারিতা

উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও চুমুর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক উপকারিতা। যেমন: যাঁরা নিয়মিত চুমু খান, তাঁদের অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়। চুম্বন করলে মেজাজ ভালো থাকে। প্রতিদিন সকালে মাত্র ২ মিনিটের একটি চুম্বন, আপনার মেজাজকে উৎফুল্ল করতে সাহায্য করবে। চুমু খেলে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

ফুসফুস অনেক শক্তিশালী হয় এবং এর কার্যক্ষমতা আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পায়। আবার, মহিলারা যখন গর্ভবতী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, তখন চুম্বন তাদের কাছে খুব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কারণ, চুমুর মাধ্যমেই তারা মিলিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে।

একটি গবেষণা করে দেখা গেছে, যে দম্পতিরা ঘন ঘন চুমু খান, তাঁদের শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ, যাঁরা চুমু খান না তাঁদের তুলনায় বেশি থাকে। খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকায় তাঁদের হৃদয় সুস্থ থাকে এবং হার্টের অসুখ বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

আবার, প্রিয়জনের কাছ থেকে পাওয়া একটি গভীর চুমু অনেকক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনের মতো ক্রনিক ব্যথা থেকেও মুক্তি দিতে সাহায্য করে গভীর একটি চুমু।

এছাড়াও, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী গর্ডন জি গ্যালোপ বলেন, চুম্বন বর্তমান মানবসমাজে যৌনসঙ্গী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুমুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহিলারা নিজের ড্রিম পার্টনার খুঁজে পেতে অন্তত গড়ে ১৫ জন পুরুষকে কিস করেন। আবার মার্কিনী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকান মহিলাদের অধিকাংশই বিয়ের আগে প্রায় ৮০ জন পুরুষকে চুম্বন করেন।

তাই মন এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত চুমু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চুমুর কিছু অপকারিতাও আছে।

চুমুর উপকারিতা

অপকারিতা

চুমুর যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চুমুর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়ার আদান প্রদান হয়। নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মাত্র ১০ সেকেন্ডের গভীর চুমুতে ৮ কোটি ব্যাকটেরিয়া একজনের লালার সঙ্গে অন্যজনের মুখে প্রবেশ করে।

আর মানুষের মুখে কমবেশি ৭০০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। নেদারল্যান্ডসের অরগানাইগেশন ফর অ্যাপলায়েড সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষকরা এমন তথ্য খুঁজে পেয়েছেন।

মুখের ভেতরের ইনফেকশনজনিত যে কোনো রোগ যেমন: ফোসকা, ওয়ার্ট ইত্যাদি একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে চুম্বনের মাধ্যমে। পেরিওডন্টাল রোগ লালার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। অর্থাৎ চুমুর মাধ্যমেও পেরিওডন্টাল রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে।

যারা হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত তাদের চুম্বনের মাধ্যমে অন্যের মুখে যে সালিভা প্রবেশ করে, তার ফলে সুস্থ ব্যক্তিরও হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লালাতে বিদ্যমান যেকোনো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সহজেই চুমুর মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আবার, ঠাণ্ডাজনিত যেকোনো সমস্যা সহজেই চুমুর মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে। তাই চুমু হতে হবে স্বাস্থ্যবান মুখের চুমু। যদি আপনার ঠোঁটে বা মুখে কোনো রোগ থাকে, তাহলে কাউকে আদর করার জন্যও চুমু খাওয়া ঠিক হবে না।

কারণ ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আমাদের সবার চুমুর আদান প্রদানে সতর্ক হওয়া উচিত। পাশাপাশি, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা উচিত।

চুমু খাওয়ার উপকারিতা

সামারি

গবেষকদের মতে যারা নিয়মিত চুম্বন করে, জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা বেশ ইতিবাচক হয়। এই সব যুগল অন্যদের তুলনায় বেশি দীর্ঘ ও সুস্থ্ জীবন যাপন করতে পারে। চুমু খেলে ইমিউনিটি বাড়ে। জন্মগত চোখের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও আরও বেশ কিছু জন্মগত জটিল রোগও সেরে যায়।

তাই আপনার ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে দিনে অন্তত একবার হলেও আপনার প্রিয় মানুষটিকে চুম্বন করুন। দেখবেন শরীর আর মন দুটোই সবসময় অনেক ভালো থাকবে।

আবার, চুমুর অনুভূতি বহুদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। আর এই সুখানুভূতির স্থায়িত্ব যত বেশি হবে, আপনি তত বেশি দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকতে পারবেন। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে চুমুর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।

তাই চুমুটা অবশ্যই হতে হবে স্বাস্থ্যকর মুখের চুমু। একচেটিয়া সবাইকে চুম্বন করা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি, চুমুর সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে আপনার পার্টনারকেই বেশি বেশি চুম্বন করার চেষ্টা করুন।

নোট: আপনি কি জানেন? হাসিরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।( হাসির স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো জানতে এখানে ক্লিক করুন )

Leave a Comment