ক্যালোরি যুক্ত খাবার: এটার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
(ক্যালোরি যুক্ত খাবার তালিকা)
ক্যালোরি হলো শক্তির একক যা আমাদের শরীর দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা, টিস্যু মেরামত এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন। যারা তাদের ক্যালোরি গ্রহণ বৃদ্ধি করতে চান তাদের জন্য, কিছু খাবার বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, কিছু খাবারে প্রচুর ক্যালরি থাকে, আবার কিছুতে কম।
এই প্রতিবেদনে, আমরা উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার এর একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রদান করবো, তাদের পুষ্টিগুণ, সুবিধা এবং অসুবিধা সহ। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবারকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে যেমন:
বাদাম ও বীজ
উদাহরণ: আখরোট, বাদাম, পেস্তা, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ার বীজ, চিয়া সিড, তিসির বীজ, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ার বীজ, তিলের বীজ ইত্যাদি।
ক্যালোরি: প্রতি আউন্সে 150-165 ক্যালোরি।
পুষ্টিগুণ: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন E, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, খনিজ, জিংক, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট,ডায়েটারি ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি।
উপকারিতা: পুষ্টিকর, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী, ত্বকে বয়সের চাপ কমায় এবং ব্রণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য।
আপকারিতা: অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে তাই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাওয়াই ভালো।
শুকনো ফল
উদাহরণ: খেজুর, এপ্রিকট, কিশমিশ, শুকনো আপেল, শুকনো পেঁপে, আমসি, আমসত্ত্ব, ক্রানবেরি, ফিগ, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।
ক্যালোরি: প্রতি আউন্সে 217-277 ক্যালোরি। সাধারণ ফলকে শুকিয়ে ফেলার পর এর মধ্যকার উপাদানের ঘনত্ব বেড়ে যায় বলে শুকনো ফলে সাধারণ ফলের চেয়ে পুষ্টি বা ক্যালরি বেশি।
পুষ্টিগুণ: ফাইবার, ভিটামিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, রিবোফ্ল্যাভিন, থায়ামাইন, আয়রন ইত্যাদি।
উপকারিতা: পোর্টেবল, দীর্ঘস্থায়ী, শক্তির দ্রুত উৎস, হজমে সহায়তা করে, প্রস্রাবের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
অপকারিতা: চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
চর্বিযুক্ত মাছ
উদাহরণ: স্যামন, টুনা, হ্যালিবাট, সার্ডিন, ম্যাকরেল, ট্রাউট, সোর্ডফিশ, হেরিং, সার্ডিন, ভেনডেন্স ইত্যাদি।
ক্যালোরি: প্রতি 3 আউন্সে 177-206 ক্যালোরি।
পুষ্টিগুণ: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন A,D, দ্রবণীয় ভিটামিন ইত্যাদি।
উপকারিতা: হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায়, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসের সম্ভাবনা কমায়,কার্ডিওভ্যাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে,
অপকারিতা: কিছু প্রজাতির মাছে পারদ বেশি হতে পারে, তাই অতিরিক্ত খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডেয়ারি এবং মিষ্টি পণ্য
উদাহরণ: পুরো দুধ, পনির, মাখন, দই, চকোলেট, কেক, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, সোডা, চিজ, ঘি, ছানা ইত্যাদি।
ক্যালোরি: প্রতি কাপে 122-150 ক্যালোরি।
পুষ্টিগুণ: প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন A, D, ভিটামিন বি১২, পটাসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি।
উপকারিতা: হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, পেশী বৃদ্ধিতে অনেক কার্যকরী, স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা এবং রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
অপকারিতা: অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রক্রিয়াজাত খাবারের সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।
উচ্ছ ক্যালরিযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার
- বাদাম এবং বীজ: এতে প্রচুর স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে।
- ফ্যাটি মাছ: স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকেরেলের মতো মাছগুলিতে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যাভোকাডো: এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার এবং ভিটামিন থাকে।
- ডার্ক চকোলেট: এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- শুকনো ফল: এতে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার কীভাবে স্বাস্থ্যকরভাবে খাবেন
- মডারেশনে খান: যেকোনো উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারই মডারেশনে খাওয়া উচিত।
- স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে মিশিয়ে খান: উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার সবজি, ফল বা শস্যের সাথে মিশিয়ে খান।
- ধীরে ধীরে খান: ধীরে ধীরে খাওয়া আপনাকে পরিপূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করবে এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করলে অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার ক্যালোরি চাহিদা নির্ধারণ
- বয়স: সাধারণত, কম বয়সীদের বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন হয়।
- লিঙ্গ: পুরুষদের সাধারণত নারীদের চেয়ে বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন হয়।
- ওজন: বেশি ওজনের মানুষের কম ওজনের মানুষের চেয়ে কম ক্যালোরি প্রয়োজন।
- সক্রিয়তা: বেশি সক্রিয় মানুষের বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন হয়।
ক্যালোরি গণনা
- আপনি কতটা ক্যালোরি গ্রহণ করছেন এবং পোড়াচ্ছেন তা জানতে আপনি একটি খাদ্য ডায়েরি রাখতে পারেন।
- অনেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান রয়েছে যা আপনাকে ক্যালোরি গণনা করতে সাহায্য করতে পারে।
পেশাদার পরামর্শ
- কোনো খাদ্য কার্যক্রম শুরু করার আগে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিক্সিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন।
- তারা আপনার জন্য ব্যক্তিগতকৃত খাদ্য পরিকल्पনা তৈরি করতে পারেন যা আপনার স্বাস্থ্যের লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন করে।
আরো পড়ুন: কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার: একটি বিস্তারিত এবং বিশ্লেষণমূলক আলোচনা
শেষ কথা
আমরা একটি নির্দিষ্ট ক্যালোরি যুক্ত খাবার তালিকা প্রদান করেছি, তবে স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবারের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবারগুলি বেছে নিয়ে এবং মডারেশনে খাওয়ার মাধ্যমে, আপনি আপনার ক্যালোরি চাহিদা পূরণ করতে পারেন এবং একই সাথে স্বাস্থ্যকর থাকতে পারেন।
আপনি যদি ওজন বাড়াতে বা কমাতে চান, তাহলে আপনার ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ সামঞ্জস্য করুন এবং একজন পেশাদারের পরামর্শ নিন।