আমলকির সমস্ত উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

(আমলকির সাস্থ্য উপকারিতা)

আমরা কম বেশি সকলেই আমলকি চিনি এবং জানি। “আমলকি” টক আর তেতো স্বাদের ভেষজ গুণে ভরা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ছোট আকৃতির ফল। আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica

আমলকি ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গণের একপ্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘আমলক’। আমলকী গাছ ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কা, হংকং, লাওস, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় বেশি দেখা যায়।

আমলকি এবং আমলকির পাতা দুইটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়াও, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও দারুন সাহায্য করে এই ফল। এটার ঔষাধি গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও অনেক আগে থেকে আমলকির নির্যাস ব্যবহারিত হয়ে আসছে।

আমলকির উপকারিতা

আমলকির পুষ্টিগুণ

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ‘সি’। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে তিন গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এছাড়াও, কমলালেবুর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

এছাড়া, প্রতি ১০০ গ্রাম বা ১কাপ পরিমাণ আমলকিতে রয়েছে –

  • আঁশ ৩.৪ গ্রাম,
  • শর্করা ১৬.২ গ্রাম,
  • ক্যালরি ৩২ কিলোক্যালোরি,
  • খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি,
  • ক্যালসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম,
  • ক্যারোটিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম,
  • খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম,
  • পানি ৯১.৪ গ্রাম,
  • ক্যালসিয়াম ৩৪ গ্রাম,
  • প্রোটিন ০.৯ গ্রাম,
  • ভিটামিন বি১- ১০.০২ মিগ্রা,
  • ভিটামিন২- ২০.০৮
  • আয়রন ১.২ মিগ্রা,

এর স্বাদ প্রথমে কষটে লাগলেও খাওয়া শেষে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। চলুন তাহলে এবার আমলকি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-

আমলকির স্বাস্থ্য উপকারিতা

আমলকির স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুষ্টিবিদদের মতে, আমলকির স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। কারণ, একজন মানুষের শরীরকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখতে দৈনিক যেসব ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন হয়, তার বেশিরভাগই আমলকির মধ্যে রয়েছে।

একই সাথে, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ফসফরাসের মতো বিভিন্ন উপাদানও রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

আবার, এই ফলের ভাইরাস ও বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার মতো গুনাগুণ রয়েছে। তাই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমলকির ভূমিকা অপরীসিম।

এছাড়াও, কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়মিত আমলকি খাইলে মুখের রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্ত রোগ প্রতিরোধ করতেও টাটকা আমলকি বেশ কার্যকরী। এছাড়া জন্ডিস, পেটের পীড়া, লিভার, সর্দি, কাশি ও রক্ত হীনতার জন্যও খুবই উপকারী এই ফল।

আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী। আমলকীর রসের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খাইলে চোখের বিভিন্ন ধরনের অসুখ ভালো হয়, যেমন : গ্লুকোমা, কনজাংটিভ ইত্যাদি।

এছড়া, চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন: চোখ চুলকানি বা পানি পড়া, চোখের প্রদাহ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল, এই উপাদানটি চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে বেশ কার্যকরী।

আমলকিতে ক্রমিয়াম নামক একটি উপাদান রয়েছে, যেটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, হার্ট ভালো রাখতে এবং পেশি শক্ত ও নমনীয় করতেও সাহায্য করে। আমলকীর বিভিন্ন ধরনের লিভারের সমস্যা দূর করার মত ক্ষমতা রয়েছে।

এটি জন্ডিসের মত রোগ প্রতিরোধ করতেও বেশ উপকারী। দীর্ঘ মেয়াদি সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত আমলকি খেতে পারেন। মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও এটি খাইতে পারেন।

আমলকিকে চুলের টনিক বলা হয়। কারণ, চুলের যত্নে আমলকি একটি অপরিহার্য উপাদান। নিয়মিত আমলকি খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, পাশাপাশি, চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে। চুলকে খুশকিমুক্ত ও কম বয়সে চুল পাকা রোধ করতেও আমলকি খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন সকালে মধুর সঙ্গে আমলকির রস মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন চর্মরোগ নিরাময় হয়।

এছাড়া, এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং মুখের চামড়ায় দাগ পড়া প্রতিরোধ করে। আমলকির পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগালে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়, পাশাপাশি ত্বকের বলিরেখাও কমে যায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি রেডিকেলস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আর ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার ও সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম একটি কারণ হলো এই ফ্রি রেডিকেলস।

এছাড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, মানসিক চাপ কমাতে, কফ, বমি, অনিদ্রা এবং ব্যথা-বেদনায় আমলকির কার্যকারিতা অনেক। ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমা প্রতিরোধ করতে আমলকির জুস বেশ কার্যকরী। শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা যেমন: অ্যাস্থমা নিরাময়ে আমলকির উপকারিতা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি পাচনতন্ত্রের সুষ্ঠু কার্যকরীতার জন্য আমলকি বেশ কার্যকরী।

আমলকি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে থাকা বর্জ্য পদার্থ আস্তে আস্তে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। একই সঙ্গে হজম ক্ষমতা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। এটি হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে। পাশাপাশি, মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকির আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করতে বেশ কার্যকরী।

আমলকির উপকারিতা

সামারি

এমন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল প্রতিদিনের খাবারের অংশ হিসাবে থাকলে, একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবন আরও সুস্থ এবং সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। তাই আপনিও প্রতি দিন সকালে খালি পেটে ১-২টি আমলকি খেতে পারেন।

আবার, এর থেকে বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে, তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, কিডনি রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমলকি খাওয়া উচিত। শারীরিক সুস্থতায় তাই প্রতিদিন অন্তত একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

Leave a Comment